বাগেরহাট প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দু’দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪৭টি ইউনিয়নের ৬০ হাজারের অধিক পরিবার। পানির তোড়ে ভেঁসে গেছে ৯ হাজার চিংড়ি খামার ও সাড়ে ৭ হাজার পুকুরের মাছসহ ২৫০টি খামারের শিলা কাঁকড়া। তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা ও বর্ষাকালীন সবজি ক্ষেত। চরম দুর্ভোগে পড়া শরণখোলা, মোংল,মোরেলগঞ্জ, রামপাল উপজেলার নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া হাজারো মানুষ ১৬টি সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে মোরেলগঞ্জের পানগুছি, শরণখোলার বলেশ্বর, মোংলার পশুর, বাগেরহাটের ভৈরব, দড়াটানাসহ সব নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বেড়েছে। শরণখোলা ও মোংলা উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, এই দুটি উপজেলায় বুধবার রাত থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়া দূর্গতরা সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

শরণখোলা ১৩ টি ও মোংলায় ৩ টি সাইক্লোন সেল্টারে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষথেকে পানিবন্দি ও সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় দূর্গতদের রান্না করা ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাইক্লোন সেল্টারে আসতে ইচ্চুক পানিবন্দিদের সেখানে নিয়ে আসতে রেডকিসেন্টসহ জনপ্রতিনিধিরা কাজ করছে। অতিবৃষ্টিতে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পাড়ছে না। বৃহস্পতিবার দিনভার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম।

শরণখোলা উপজেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ২৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দুদিনে অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় অর্ধশত পরিবারসহ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শরণখোলা ১৩ টি সাইক্লোন সেল্টারে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া প্রায় ৭০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া, বৃষ্টির পানিতে আউশ ও আমনের বীজতলার ৮০ভাগই পানিতে ডুবে রয়েছে। শাক-সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসলও তলিয়ে গেছে । মাছের খামার ও পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে প্রায় কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির চাষের মাছ।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত জানান, পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকা পরিদশর্ন করে চরম দুর্ভোগে থাকা পরিবারের সদস্যদের বুধবার সন্ধ্যা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কাজ চলছে। তাদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে। সার্বিক বিষয় দেখতে বিকালে জেলা প্রশাসক শরণখোলার দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

মোংলায় জলাবদ্ধতার শিকার প্রায় ১০ হাজার পরিবার। এদর মধ্যে বুধবার বিকাল পর্যন্ত ৩ টি সাইক্লোন সেল্টারে তিনশতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে উঠা লোকজনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদার জানান, ঘরবাড়ী তলিয়ে যাওয়ায় যারা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবেন ততক্ষণ তাদের খাবারদাবার দেয়া হবে। এছাড়াও বিকেলে কামারডাঙ্গা এলাকারও ৫০ টি পানিবন্দি পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলায় ১৫ হাজারের অধিক পরিবার গতদুদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বেড়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুপুরে দূর্গত এলাকা ঘূরে দেখেছেন জেলা প্রশাসক। একইভাবে রামপাল , কচুয়া ও বাগেরহাট সদর উপজেলায় ১০ হাজারের অধিক মানুষ পানিপন্দি হয়ে পড়েছে।

সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের বগী এলাকার নির্মানাধীন বেড়িবাঁধের মধ্যে দুই শতাধিক পরিবার এবং খুড়িয়াখালী গ্রামের মূল বাঁধের বাইরে আরো প্রায় তিন শত পরিবার চরম কষ্টে আছে। পানি নামার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন জানান, উপজেলা সদরসহ তার ইউনিয়নে প্রায় তিন সহ¯্রাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি তিনি নিজেও এসব পরিবারের খোঁজ নিচ্ছেন।

বাগেরহোট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাসেল আহম্মেদ জানান, বাগেরেহাট জেলায় দু’দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিপাতে ৪৭টি ইউনিয়নে পানির তোড়ে ভেঁসে গেছে ৯ হাজার চিংড়ি খামার ও সাড়ে ৭ হাজার পুকুরের মাছসহ ২৫০টি খামারের শিলা কাঁকড়া। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতির পরিমান সাড়ে ৮ কোটি টাকা। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বাগেরহাটে দুদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিতে হাজাহ-হাজার হেক্টরের আউশ-আমনের ক্ষেত ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে শরণখোলা উপজেলায় ২৪৫ মিলিমিটার। এছাড়া জেলায় গড়ে ৯৬ দশমিক ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যদি এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তবে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

(এসএকে/এসপি/জুলাই ২৯, ২০২১)