এমদাদুল হক স্বপন, ঝালকাঠি : ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় বছরের পর বছর হচ্ছেনা সার্জিক্যাল অপারেশন। অচল পড়ে থাকায় নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে ৮টি অত্যাধুনিক অজ্ঞান মেশিন। একই সাথে নাক কান গলার চিকিৎসক না থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে হতাশ হয়ে । এ কারনে বিশেষ করে গরীব অসহায় মধ্যবিত্ত রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম দূর্ভোগে। প্রতি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এ সমস্যা সমাধানে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের কথা জনালেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা। 

ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে চালানো হচ্ছে ১০০ শয্যার এই হাসপাতাল। যদিও বর্তমানে নার্স পদে পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ দেয়া হলেও বিশেষ করে চিকিৎসকের অনেক পদ শূণ্য। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখি, মাসেমাসে কর্তৃপক্ষ বরাবর চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও কাজের কাজ হচ্ছেনা কিছুই। সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ২৩ টি পদ থাকলেও বাস্তবে মাত্র ৬ জন কনসালটেন্ট কর্মরত আছে। এছাড়া করোনার শুরু থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রেষনে আনা হয়েছে ১২ জন চিকিৎসক। কিন্তু সার্জিক্যাল ও ইএনটি পদের কনসালটেন্ট নিয়োগ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।

গত ১০ আগষ্ট সদর হাসপাতালে কথা হয় নলছিটি থেকে আগত পা ভাঙ্গা রোগী মরিয়ম বেগমের সাথে । ঘরের সিড়ি দিয়ে নামার সময় পিছলে পড়ে বাম পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। নলছিটির একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ব্যান্ডেজ করে অপরাশেনের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। লকডাউনের মধ্যে কষ্ট করে হাসপাতালে এসে মরিয়ম জানতে পারেন চিকিৎসক না থাকায় অপারেশন হয়না। রিকসা চালক স্বামী রহিম জমাদ্দার বলেন, ধারকর্য করে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলাম অপারেশন করাতে কিন্তু এখান থেকে বলছে বরিশাল যেতে। বরিশাল গিয়ে অপারেশন করানো এবং থাকা খাওয়া খরচ চালানোর সাধ্য আমার নাই। এভাবে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা সার্জিক্যাল রোগীরা দূর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। সেই সাথে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে তাদের। গত ৯ জুলাই কাঠালিয়ার আমুয়া বন্দরের সবজী বিক্রেতা সবুজ হাওলাদার সদর হাসপাতালে এসেছিলেন কানের চিকিৎসা করাতে। আঘাত লেগে কান থেকে রক্ত পরে ঘা হয়েছে। কিন্তু দূর থেকে এসে জানতে পারেন চিকিৎসক নেই। যেতে হবে বরিশাল। বরিশাল গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ না থাকায় কাঠালিয়া গিয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করানোর কথা জানালেন সবুজ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে সর্জিক্যাল চিকিৎসক নেই প্রায় ৩ বছর। অপরদিকে নাক কান গলার চিকিৎসক নেই ২ বছরের বেশি। এ কারনে ঝালকাঠির সকল রোগীদের সার্জিক্যাল অপারেশন এবং ইএনটির চিকিৎসা করাতে যেতে হচ্ছে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে। স্বচ্ছল ব্যক্তিরা বরিশাল ক্লিনিকে প্রাইভেট চিকিৎসকদের চিকিৎসা নিতে পারলেও অস্বচ্ছল রোগীরা তা পারছেনা। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে একটি সাধারন বা ছোট অপারেশন করাতে খরচ হয় ১ থেকে দেড় হাজার টাকা। বরিশাল বা বাহিরে সেই অপারেশ করাতে লাগে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। নাক কান গলার চিকিৎসা খরচও অনুরুপ।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও অজ্ঞান চিকিসক শরীফ ইকবাল জানান, আমি অজ্ঞান চিকিৎসকের দায়িত্বে আছি ১ বছরের বেশি। এখানে ৮টি অত্যাধুনিক অজ্ঞান মেশিন থাকলেও এ সময়ের মধ্যে তা ব্যবহার করে ১টি অপারেশন করা সম্ভব হয়নি চিকিৎসক না থাকার কারনে। তাই লোকবল নিয়োগ না দিলে মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সার্জিক্যাল চিকিৎসক পদে নিয়োগ দেয়া জরুরী হয়ে পরেছে। কারন প্রতিদিন অনেক রোগী এখানে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। তাছাড়া মধ্যবিত্ত ও গরিব অসহায় রোগীরা এখানে সার্জিক্যাল চিকিৎসা পেলে সময় এবং আর্থিক সাশ্রয় হতো।

(এস/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০২১)