কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : পদ্মা নদীর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অন্তত ২০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির ফসল।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি প্রতিদিন প্রায় দশমিক ১২-১৫ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার বিপৎসীমার দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এদিকে দৌলতপুর উপজেলার ভাগজোত পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদীতেও অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী ও মরিচা ইউনিয়নের ফসলি জমিতে পানি ঢুকে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির আউস ধান, কলা ও পাটসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে শুধু পানি আর পানি। আকস্মিক বন্যায় মাঠের ফসলের সঙ্গে সঙ্গে মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুতেও পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকের বাড়ির উঠান ও ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় বাস করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ঘরের ভিতরে বাঁশের মাচা ও নৌকার ওপর মানুষকে বসে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বাড়িঘর ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্থানীয় স্কুল-মাদরাসা বা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে শত শত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, সর্বশেষ ২০১৯ সালে পদ্মার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। গত বছর বন্যার পানি না বাড়ায় কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন পদ্মাপাড়ের মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দু’দিন আগেও যেসব এলাকা শুকনা ছিল এখন সেখানে পদ্মার পানি থৈ থৈ করছে। অনেকের বাড়িতে রান্না করার জায়গাটুকুও ফাঁকা নেই। ফলে তাদের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল ও চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, চরাঞ্চলের অন্তত ২৫টি গ্রামে অধিকাংশ বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। দুই ইউনিয়নের আট হাজার পরিবারের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, পানিবন্দি মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত তাদের সহায়তা করতে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ. ক. ম সারওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, পদ্মায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার চার ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন।

(ওএস/এএস/আগস্ট ২১, ২০২১)