ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : তিস্তা নদীর স্পার বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। বাঁধটিকে অবলম্বন করে বসবাস করা দুই’শ পরিবার পড়েছেন চরম বিপাকে। ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়িতে তিস্তা নদীর স্পার বাঁধটি ভেঙ্গে গেছে । ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে । ডান তীর বাঁধের নিয়ন্ত্রক এই স্পারটি রক্ষায় রবিবার সকাল থেকে বালুর বস্তা ফেলা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মধ্যরাত দুইটার দিকে বাঁধটির এক’শ মিটার ভেঙ্গে গেছে। যার ফলে পুরো ভেন্ডাবাড়ি এলাকার আড়াই হাজার পরিবারে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

স্পার বাঁধে বাস করা শামসুল ইসলাম কান্নাজড়িতকন্ঠে বলেন, ’তিস্তা নদী হামার সব খেয়া ফেলাইছে। বাঁধের উপরোৎ তিন বছর আগোৎ থাকি কোন রকমে ঘর বানে দিন কাটাইছিনো। এই বাঁধও ভেঙ্গে গেইছে। থাকমো এলা কোনঠে।’

কুতুব আলী বলেন, মোর ৫ জনের সংসার। স্পার বাঁধোৎ থাকছোনো হামরা। তিস্তায় খেয়া ফেলে দিসে তামোনলায়। কয়েক দফায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গন শুরু হইলে সর্বশেষ স্পারটি ভাঙ্গি যাওয়ায় গতকাল সকালে বাড়ি ঘর সরে নিয়ে আসি। হামরা এ্যালা যামো কোনঠে। তিস্তা নদীর নয়া চ্যানেল তৈরি হওয়ায় নদী তৈরি হইল। এই এলাকার শত শত পরিবার কোনঠে যাইবে ।

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রব্বানী বাবু বলেন, স্পার বাঁধটির মাঝ অংশ হুমকীতে ছিলো। সেখানে বালুর বস্তা ফেলে রক্ষা করা হয় কিন্তু শেষ অংশ গতকাল হুমকীর মুখে পড়ে। পাঁচ’শ বালুর বস্তা দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করা হলেও মধ্যরাতে ধ্বসে পড়ে।

স্থানীয় সাংবাদিক নূর আলম বলেন, বাঁধ থেকে আড়াই’শ মিটার দূরে আশ্রয় প্রকল্প। সেখানে ৩৯ পরিবার বসবাস করে। এই এলাকায় আড়াই হাজার পরিবার রয়েছে। তারা সবাই নদী ভাঙ্গা। আবারো আতংকে পড়েছেন। তারা এখন যাবে কোথায়।

ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, তিস্তা এই এলাকার শতাধিক বাড়ি ঘর খেয়ে ফেলেছে গেল তিন দফার পানি বৃদ্ধিতে। হুমকির মধ্যে রয়েছে ভেন্ডাবাড়ি ও ছাতুনামার চরের হাজার হাজার পরিবার। ভেন্ডাবাড়ি চরের দুই নম্বর স্পারটি রক্ষায় কয়েক দিন থেকে কাজ করা হচ্ছিলো। রবিবার মধ্য রাতে পানির তোড়ে ভেঙ্গে যায়। কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। তিনি বলেন, স্পারটি ভাঙ্গণ ধরায় ডানতীর বাঁধ জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নে মিলিত হয়েছে। এই অংশটি পিছনে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা জানান, স্পার বাঁধটির এক’শ মিটার ধ্বসে পড়েছে। বালুর বস্তা দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। ওই এলাকায় শত শত মানুষ বাস করে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে।

(ওআরকে/এএস/আগস্ট ৩০, ২০২১)