গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : আখ চাষে বাম্পার ফলনে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চাষিদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও নিয়মিত পরিচর্যার ফলে এবছর রোগবালাই এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় উপজেলায় আখের উৎপাদন অনন্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হয়েছে।

আখ চাষে প্রতি বছরের তুলনায় খরচ কম হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। আখ চাষের সঙ্গে অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসল বোনার সুযোগ থাকায় চাষিদের মাঝে আখের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আখ বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। চিনি ও গুড় তৈরির অন্যতম কাঁচামাল হলো আখ। আখের পাতা ও ছোলা জ্বালানি এবং জৈবসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাট ও তামাকের মতো আখও চাষিদেরকে নগদ অর্থ দেয়। তাই বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পাটের চেয়ে আখ অধিক উৎপাদন হওয়ায় চাষিরা আখ চাষেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় কিছুনা কিছু আখের চাষ হয়। তবে জলবায়ুর প্রভাব অনুযায়ী দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল আখ চাষের জন্য বেশি উপযোগী। উৎপাদন শীর্ষে ব্রাজিল হলেও, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চাষ হচ্ছে চীন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, কলোম্বিয়া, পাকিস্তান, ভারতসহ বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় আখ চাষ করে লাভবান হচ্ছে বিভিন্ন স্থানের চাষিরা।

অক্টোবর-ডিসেম্বর (কার্তিক অগ্রহায়ণ) মাসে আখ রোপন করা হয়। অঙ্গজ পদ্ধতিতে আখের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। মাতৃ গুনাগুণ বজায় রাখার জন্য অঙ্গজ পদ্ধতিতে অর্থাৎ কাটিং এর মাধ্যমে বংশবিস্তার করা ভালো। কাটিং এর সফলতার হার প্রায় শতভাগ। আখের উৎপাদন ও বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় চাষিরা অনেক খুশি। বিগত বছরের তুলনায় এবছর আখের উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। ব্যবসায়িরা চাষিদের কাছ থেকে আখ ক্রয় করে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি করেন। এছাড়াও চাষিদের উৎপাদিত আখ স্থানীয় মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে।

উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের বালির হাওলা গ্রামের আখ চাষি মিজান মোল্লা বলেন, ১৫ শতক জমিতে আখের চাষ করেছি, এতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আখের ক্ষেত বেপারীর কাছে ৬০ হাজার টাকায় পাইকারী বিক্রি করেছি। ভালো ফলন হওয়ায় আমার অনেক লাভ হয়েছে।

গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৩৩ হাজার ৮৭৫ হেক্টর। উপজেলায় ৮৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ করা হয়েছে। আখের ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি হেক্টরে ২৫ টন করে আখ উৎপাদন হবে। উপজেলায় প্রায় দুই হাজার ১২৫ টন আখের উৎপাদন আশা করা যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, আমাদের দেশে চিনি ও গুড় তৈরির অন্যতম কাঁচামাল হলো আখ। দক্ষিণাঞ্চলে চিনি ও গুড় উৎপাদনের জন্য কোনো শিল্প-কলকারখানা না থাকায় এ অঞ্চলে আখ চাষে চাষিদের আগ্রহ কম। এ অঞ্চলে চিনি ও গুড় উৎপাদনের জন্য কল-করাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে এ অঞ্চলের চাষিরা আখ চাষে আরো আগ্রহী হবে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এ উপজেলায় আখের উৎপাদন সন্তোষজনক।

(এসডি/এএস/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১)