ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ : পানি কমার সাথে সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি। চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও কৃষকের। সিরাজগঞ্জে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়েছে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল। রোপা আমন, বোনা আমন, আমনের বীজতলা, আগাম শীতকালিন সবজি, কলা ও আখসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রনোদনা প্রদানের পাশাপাশি বিকল্প জাতের ধান রোপন করে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।

চলতি বন্যায় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল শষ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও জেলা সদর, কাজিপুর, চৌহালী, বেলকুচি, কামারখন্দ উপজেলার বিস্তীর্ন ফসলি জমি। যমুনায় পানি কমছে, সাথে সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে এসমস্ত এলাকার কৃষি ও কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি জেলার নয়টি উপজেলার ৭১৯২ হেক্টর জমির রোপা আমন, ১০৩৫ হেক্টর জমির বোনা আমন, ১০১ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ৩৩০ হেক্টর জমির আগাম শীতকালিন সবজি, ২৮০ হেক্টর জমির আখ ও ১৮ হেক্টর জমির কলাসহ ৮৯৫৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ফলে আমন ধান ও শীতকালিন সবজিসহ কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হবার আশংকা দেখা দিয়েছে।

বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন জেলার কৃষকেরা। নয়টি উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়ন ও ৩ টি পৌরসভা এলাকায় রোপা আমন নষ্ট হওয়ায় ৫১,৯০০ জন, বোনা আমনে ৪৩৪৭ জন, আমন বীজতলা লাগানো ২৭৬০ জন, আগাম শীতকালিন সবজি লাগানো ৮৮৬০ জন, আখ লাগানো ৩৫০০ জন ও কলা চাষ করা ৬৮৫ জন সহ মোট ৭২ হাজার ৫২ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জমি প্রস্তুত করা, বীজ লাগানো, সাড় ও কিটনাশক দেয়া এবং শ্রমিক বাবদ ব্যাপক পরিমান ব্যায় করার পর ফসল তলিয়ে যাওয়ায় মুলধন সংকটে পড়েছেন এ সমস্ত কৃষকেরা। চরাঞ্চলের কৃষি জমির পানি নেমে গেলেও বিল ও নিম্নাঞ্চলের কৃষি জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে এ সকল জমিতে চলতি মৌসুমে পুনরায় চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন কৃষি উৎপাদন নির্ভর কৃষকেরা। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পুনরায় চাষাবাদের জন্য বীজ, সাড়ের পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনা ও কৃষিঝন প্রদানের দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা।

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ভাদাস গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, চলতি মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছিলাম। জমি প্রস্তুত, বীজ সংগ্রহ, সার ও কীটনাশক প্রদান এবং শ্রমিকদের মজুরি বাবদ প্রতি বিঘায় ১৫ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছে। এতটাকা ব্যায় করার পর আমার জমিতে পানি উঠে পড়ায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নামতেও সময় লাগবে, ফলে এ মৌসুমে আর চাষাবাদ করা হবে না আমার। কৃষিনির্ভর আমার পরিবার, একদিকে মুলধন শেষ হয়ে গেল, অন্যদিকে কোন ফসল পাওয়া যাবে না। সারাবছর আমি পরিবার নিয়ে কিভাবে চলবো এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।

একই গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, ১৭ বিঘা জমিতে আমন ধান ছিল, দুই বিঘায় ছিল বীজতলা, সবই বন্যার পানি খেয়ে গেছে। পানি নামলে সরিষার আবাদ করতে হবে। কিন্তু সরিষা লাগানোর মুলধন কোথায় পাব, সরকার সহযোগিতা না করলে আর চাষাবাদ করা হবে না।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোঃ আবু হানিফ জানান, কৃষকদের লোকসান পুষিষে পুনরায় চাষাবাদ করার জন্য বীজ-সারসহ প্রণোদনা প্রদান করার পাশাপাশি জমির পানি নেমে গেলে বিকল্প নাভি ও গারিঞ্জা জাতের ধান লাগিয়ে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রচেষ্টা করা হবে।

প্রতিবছরেই বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির মুখে পড়েন যমুনা পাড়ের এই জেলার কৃষকেরা। কৃষকদের ক্ষতি পূরন করার পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন সচল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে সরকার এমনটিই প্রত্যাশা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের।

(আই/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১)