এমদাদুল হক স্বপন, ঝালকাঠি : আর ক সপ্তাহ পরই শুরু হবে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী দূর্গাপুজা। এ বছর দূর্গার কাছে বৈশ্বিক মহামারি করোনা থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। ঝালকাঠিতে প্রতিবছরই জমজমাট ভাবে শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। তবে করোনার কারণে গতবারের মতো এবারও আনন্দ উদযাপনে কিছুটা কমতি হতে পারে। পূজাকে সামনে রেখে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। জেলায় এবছর পূজা হবে মোট ১৬৯ টি মন্ডপে। একযোগে কাজ চলছে সদরের ৭৩ টি, কাঠালিয়া উপজেলায় ৫৪ টি, রাজাপুরে ২১টি এবং নলছিটি উপজেলায় ২১ টি মন্ডপে। মন্ডপ ঘুরে দেখাগেছে এখন পর্যন্ত প্রতিমা তৈরির প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আর কিছুদিন পরেই রং তুলির আঁচড়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে প্রতিমাগুলো।

এ নিয়ে কথা হয় প্রতিমা কারিগর পরাণ পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার ৯টি মন্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। সময়মত এসব প্রতিমা পূজা উদযাপন কমিটির নিকট হস্তান্তর করতে দিনরাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে করোনার আগে প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করতে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু চলমান পরিস্থিতির কারনে প্রতিমা তৈরির মজুরী ২৫/৩০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।

হরিসভা রাধাগবিন্দ মন্দিরের দুর্গামন্ডপের প্রতিমা কারিগর উত্তম পাল বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্যই এই পেশায় আছি। কিন্তু আমার সন্তানরা অন্য পেশায় চলে গেছে। বর্তমানে জিনিষপত্রের দাম বাড়ায় এখন পোষায় না। আমি এবার ১৪ খানা প্রতিমা বানানোর কাজ পেয়েছি। বাড়িতেও কিছু প্রতিমা বানিয়ে রেখেছি কম দামে রেডিমেট বিক্রি করার জন্য।

গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া থেকে ঝালকাঠি মদনমোহন আখড়াবাড়ি মন্ডপে প্রতিমা তৈরি করতে আসা ভাস্কর শ্রীবাস গাইন বলেন, হাতে সময় আছে ২০ দিন। এরমধ্যে মাটির কাজ, রং, পোষাক এবং অলংকার পরানোর কাজ শেষ করে মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিমা বুঝিয়ে দিতে হবে। তাই ৫ জন মিলে কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ঝালকাঠি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তরুণ কুমার কর্মকার বলেন, করোনা পরিস্থির কারণে ১৬৯টি মন্ডপে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত রাখতে প্রতিটি মন্ডপ কমিটি প্রধানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে যেহেতু সকল মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে সেহেতু রাতে মন্ডপগুলোতে প্রতিমা এবং কারিগরদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশের মাধ্যমে এবারের শারদীয় উৎসবকে বর্ণীল ভাবে পালন করার আশাবাদী তিনি। তরুণ কুমার কর্মকার আরো বলেন, পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী দুর্গা আসবেন ঘোটকে করে, আর গমন করবেন দোলায় চড়ে। এবছর মায়ের কাছে বৈশ্বিক মহামারি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১)