ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : হাসপাতালের শিশু বেড তো ফাঁকা নেই, বরং বারান্দা ও মেঝেতেও গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে অসুস্থ শিশুদের। অনেকেই আবার গাদাগাদির ভিতরে না গিয়ে হাসপাতালের বাইরে গাছের নিচে বিছানা পেতে সেখানেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছে অসুস্থ শিশু সন্তানকে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিত্র এটি।শিশু ওয়ার্ডের প্রতিটি শয্যাতেই আছে একাধিক শিশু। কোনো কোনো শয্যায় দেখা যায় চারজন শিশুকেও।শিশুদের শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া বাড়ায় জায়গা দিতে পারছে না হাসপাতালটি। কয়দিন ধরেই চলছে এই অবস্থা।

৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভর্তি আছে ১৮৭ শিশু। এর আগের দিন ভর্তি ছিল ২০৩ জন শিশু।

এই হাসপাতালের শিশু বিভাগের ওয়ার্ড, মেঝে ও বারান্দায় রোগী রেখে চিকিৎসা কার্যক্রম চললেও গত কয়েক দিন ধরে শিশুরোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবকেরা হাসপাতালের গাছতলায় রেখে শিশুদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। হাসপাতালের ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডটিতে গত বুধবার ভর্তি ছিল ২০৩ শিশু। আজ বৃহস্পতিবার ভর্তি আছে ১৮৭ শিশু। এই শিশুদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় ভুগছে।

সরেজমিন দেখা যায়, জায়গা না হওয়ায় এক শয্যায় দুই থেকে তিন শিশুকে রাখা হচ্ছে। ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা ও অভিভাবকদের বসার জায়গায় রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। যাঁরা ওই সব জায়গায়ও স্থান পাননি তাঁরা আশপাশের ভবন, এমনকি গাছতলায় বিছানা পেতে শিশুদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। আর রাতে তাঁরা জায়গা নেন হাসপাতালের অন্য ফাঁকা জায়গায়।

শিশু ওয়ার্ডের ৫০ মিটারে দূরে হাসপাতালের ভেষজ বাগানের গাছের ছায়ায়, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনের ফাঁকা জায়গায় অনেকে শিশুদের নিয়ে অবস্থান করছেন।

ওয়ার্ডের বারান্দায় মেয়ে সুমাইয়াকে (৩) নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম। সদর উপজেলার জামালপুর থেকে এসেছেন তাঁরা। খানিকটা সময় পর মেয়ের হাতে ক্যানুলা পরানো হলে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন তাঁরা। পরে তাঁদের দেখা মিলল হাসপাতালের ভেষজ বাগানের একটি অর্জুন গাছের নিচে।

ওয়ার্ডের একটি বিছানায় শিশুদের কোলে নিয়ে বসে আছেন চারজন নারী। তাঁদের একজন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সবেদা খাতুন বলেন, তাঁরা চারজন বিছানা ভাগাভাগি করে শিশুদের চিকিৎসা নিচ্ছেন। দিনের বেলা এদিক-ওদিক গিয়ে সময় কেটে যায়। কিন্তু রাতে সমস্যায় পড়তে হয়। জায়গা না থাকায় শিশুদের নিয়ে পালা করে ঘুমাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন গত রোববার মেয়ের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। চিকিৎসক মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে এসে দেখেন, কোথাও জায়গা নেই। উপায় না দেখে হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে রাত কাটান। তিনি বলেন, ‘রাতে এখানে থাকি, দিনের বেলায় চলে আসি গাছের তলায়। আমার মতো অনেকেই শিশুদের নিয়ে গাছতলায় চিকিৎসা করাচ্ছেন।’

পঞ্চগড়ের বোদা থেকে এসেছেন মোমেনা বেগম তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ডের থেকে গাছতলাতেই ভালো আছি। যেখানে ২০ জনের মানুষ থাকার কথা, সেখানে ১০০ জন থাকেন। গরমে টেকাও যায় না।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বিভাগের চিকিৎসক শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তাদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর ও পেটের ব্যথায় আক্রান্ত। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। এ সময় অভিভাবকদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের প্রচুর তরল ও ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার দিতে হবে। শিশু ঘেমে গেলে জামাকাপড় পরিবর্তন ও ঘাম মুছে দিতে হবে।

এই চিকিৎসক জানান, স্বাভাবিক সময়ে ৬০ থেকে ৭০জন শিশু ভর্তি থাকে। এখন ১৭০ থেকে ১৮০ শিশু ভর্তি থাকছে। গতকাল ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ২০৩জন শিশু রোগী। এর মধ্যে নবজাতক ৩৬। তবে বেশিরভাগ শিশুই শ্বাসকষ্টে ভুগছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, হাসপাতালে শিশু রোগীর সেবা মানসম্মত হওয়ায় আশপাশের জেলার অনেক এলাকার অভিভাবক তাঁদের শিশুদের এখানে এনে চিকিৎসা করান। এ কারণে এই হাসপাতালে সব সময় শিশু রোগীর চাপ থাকে। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত রোগীদের শয্যায় গাদাগাদি করে, মেঝেতে ও বারান্দায় থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে।আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।

(এফআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১)