লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : সারাদেশে এখন লোডশেডিং সহনীয় মাত্রা। কিন্তু ব্যতিক্রম লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা। এখানে এখনো দৈনিক ১৮ ঘন্টা লোডশেডিং। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ আসে না। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র না থাকায় কয়েক বছর ধরেই লোডশেডিংয়ের ধকল সইতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের এ অবস্থার কারনে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘœ ঘটছে। চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতিবার এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়ে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। এর আগে প্রতিবার এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়ে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করা হতো। এভাবে দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এছাড়াও পৌর শহরের মিল, ফ্যাক্টরীর উৎপাদন ব্যাহত, ব্যবসা-বানিজ্য স্থবির, ব্যাংক, বীমা ও অফিস-পাড়ার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মক বেগ পেতে হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন। কয়েক মাস আগে ক্ষুব্ধ হয়ে লোকজন দফায় দফায় সড়ক অবরোধ, অফিসে হামলা, বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন। বর্তমানে এ অবস্থা চলতে থাকলে পূর্বের মত গ্রাহকরা রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পড়বেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।

স্থানীয় পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এজন্য ১০-১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৩-৪ মেগাওয়াট। এ কারনে শহরে দিনের বেলায় ২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে ৩ ঘন্টা লোডশেডিং হয়। আর রাতে ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ, ২ ঘন্টা লোডশেডিং হয়। রায়পুরে উপকেন্দ্র নির্মিত হলে ছোট লাইনের (ফিডার) মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এতে লোডশেডিং অনেক কমে যাবে। লো ভোল্টেজ সমস্যারও নিরসন হবে।

রায়পুরের ব্যবসায়ী আবু তাহের, আব্দুর রশিদ, নিপু, মিন্টু, সুকান্ত মজুমদারসহ কয়েকজন বলেন, জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। অথচ এখানে লোডশেডিংয়ের মাত্রা ভয়ানক। ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে জেনারেটরের ব্যবস্থা করতে হয়। এতে অতিরিক্ত ব্যয় গুনতে হচ্ছে। এলকাবাসী সমস্যা নিরসনে কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। দেখা গেছে, সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ যাওয়ার মধ্যেই থাকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে অবাধে লোডশেডিং। বিকেল ৫ থেকে রাত্র ৯ টার মধ্যে ৩-৪ বার আসা যাওয়ার মধ্যে থাকে। কিছুক্ষণ পরে আসলেও তাও কিছু সময়ের জন্য, তার উপর দেখা যায় লো-ভোল্টেজ। ফলে কম্পিউটার ও ফটোকপিসহ প্রয়োজনীয় কাজ করা সম্ভব হয় না।

রায়পুর পৌরসভা পানি সরবরাহ শাখা সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে পৌরসভার উচ্চ জলাধার টাংকিতে পানি উঠানো ব্যাহত হয়। এ কারণে গ্রাহকদেরকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করা যাচ্ছেনা। এতে পৌরসভার ২৫ হাজার মানুষ পানির কষ্টে ভুগছেন।
রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মাহফুজুর রহমান বলেন, রায়পুরে উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া আমরাও লোডশেডিংএর সমস্যায় ভুগছি। চাহিদানুযায়ী চৌমুহনী গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করায় এ লোডশেডিং হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তবে শীঘ্রই এ অবস্থার উন্নতি হবে বলে তিনি জানান।

(এমআরকে/পি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৪)