শিতাংশু গুহ


প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্গাপূজায় দুই কোটি হিন্দুর জন্যে তিন কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। মাথাপিছু প্রতিটি হিন্দু’র ভাগে পড়েছে দেড়-টাকা। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে আজকাল কি দেড়-টাকায় এক কাপ চা পাওয়া যায়? দেশে অধুনা পূজার সংখ্যা আনুমানিক পঁয়ত্রিশ হাজার। জনপ্রতি না গুনে যদি ওই অর্থ এসব পূজা প্যান্ডেলে ভাগ করে দেয়া হয়, তাহলে প্রতিটি পূজা পাবে ৮৫৭ টাকা। এই টাকা দিয়ে কি এক দিবসের প্রসাদ হবে? তবু প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। না দিলে কি হতো? বর্তমান বাজেটে সংখ্যালঘুদের জন্যে বরাদ্ধ ১.৯৩%, এনিয়ে কত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, শেষমেষ কিছু হয়নি, তা-ই বলছি, ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও’। 

বিডিনিউজ ২৪ গত বছর ২০ মে ২০২০ ‘ঈদের আগে মসজিদের জন্যে ১২২কোটি টাকা অনুদান প্রধানমন্ত্রীর’ শিরোনামে একটি নিউজ ছেপেছিলো। এর স্ক্রীনশট এখন সর্বত্র। এরকম আরো আছে, তুলনায় গিয়ে কি লাভ? প্রধানমন্ত্রী চাইলে ৩কোটি টাকা ৩শ’ কোটি হয়ে যাবে। আর ৩শ’ কোটি কোন টাকা হলো? সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত বলেছেন, ৪হাজার কোটি টাকা কোন টাকা নয়! এবারের বাজেটে ধর্ম-মন্ত্রণালয়ের জন্যে বরাদ্ধকৃত প্রায় ১৫হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২০০কোটি টাকা সংখ্যালঘুর জন্যে রাখা হয়েছে, আবুল মাল মুহিতের ভাষায় বলা যায়, ‘এটি কোন টাকা হলো? অনেকেই বলছেন, অনুদান চাইনা, চাই নির্যাতন মুক্ত বাংলাদেশ, চাই অধিকার।

পূজা নিয়ে কথাবার্তা মানে, পূজা এসে গেছে। পূজা এলে বাংলাদেশে দূর্গা প্রতিমা ভাংচুর বেশি হয়, যেন মূর্তি ভাঙ্গার মৌসুম এসে গেছে? মঙ্গলবার (২১শে সেপ্টেম্বর ২০২১) রাতে কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরে কয়েকটি পূজা মন্ডপে প্রতিমা ভাংচুর দিয়ে মৌসুম শুরু হয়েছে। এরপর শুক্রবার ২৪ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গায় প্রতিমা ভেঙ্গেছে। সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে সকল ধর্মাবলম্বীর স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। যাঁরা এই অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে রাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? হিন্দুরা পূজার বাজেট কমান, বাজেট থেকে টাকা বাঁচিয়ে মন্দির ও মূর্তি রক্ষায় ব্যয় করুন। রাষ্ট্র যেখানে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সেখানে আপনাকেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে?

আমাদের ছেলেবেলায় স্কুলে ক্লাশ এইট পর্যন্ত সংস্কৃত চালু ছিলো, পন্ডিত স্যার আমাদের পড়াতেন। তখন ‘লতা, লতে, লতাহ:-’ মুখস্ত করতে হতো, যদিও এখন ‘লতা’ ব্যতিত আর কিছু মনে নেই, তবে প্রায়ত: পন্ডিত স্যারের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। এখন শুনছি, দেশে স্কুলগুলোতে পন্ডিত স্যার নেই, হিন্দু ধর্ম শিক্ষা ও সংস্কৃত পাঠ্য বই আছে, কিন্তু শিক্ষক নেই? এসব স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া দরকার, এতে কিছু বেকার চাকুরী পাবে, শিক্ষার্থীরা কিছুটা ধর্মশিক্ষা পাবে। মুসলিম শিক্ষক দিয়ে কি হিন্দুধর্ম শিক্ষা হয়? একইভাবে একজন হিন্দু শিক্ষক দিয়ে কি ‘ইসলাম’ ধর্মশিক্ষা দেয়া উচিত? এটাও কিন্তু এক-ধরণের অবহেলা ও বৈষম্য।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।