আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : খাদ্য বান্ধব (ফেয়ার প্রাইজ) কর্মসুচীর তালিকায় নাম থাকলেও হতদরিদ্ররা চাল পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের ছয় হতদরিদ্র পরিবার ডিলার আবু জাফরের বিরুদ্ধে কার্ড রেখে চাল না দেয়ার অভিযোগ এনে বুধবার আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ ওঠেছে গত জুলাই মাসের নির্বাচনের জের ধরে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উপজেলায় কয়েক’শ হতদরিদ্রের নাম খাদ্য বান্ধব তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের কর্মী-সমর্থকরদের নাম অর্ন্তভুক্ত করেছেন। এতে উপজেলার অন্তত কয়েকশত হতদরিদ্র পরিবার সেপ্টেম্বর মাসে চাল পায়নি। খাদ্য বান্ধব তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার বিপাকে পড়েছে চাল বঞ্চিত দরিদ্র পরিবারগুলো।  দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

জানা গেছে, ২০১৬ সালে হতদরিদ্র পরিবারের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল দেয়ার জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসুচী (ফেয়ারপ্রাইজ) শুরু করেন সরকার। ওই কর্মসুচীর আওতায় আমতলী উপজেলায় ১৩ হাজার ২’শ ৪৫ জন উপকার ভোগী চিহিৃত করা হয়। বছরে মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই ৫ মাস ওই চাল বিতরনের জন্য উপজেলায় ২৪ জন ডিলার নিয়োগ দেয় উপজেলা প্রশাসন। গত ৫ বছর ধরে এ সুবিধা পেয়ে আসছে উপজেলার হতদরিদ্র ১৩ হাজার ২’শ ৪৫ পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুন মাসের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জের ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কয়েক’শ হতদরিদ্র পরিবারের নাম খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর তালিকা থেকে বাতিল করে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন। এতে বিপাকে পড়েছে উপজেলার চাল বঞ্চিত দরিদ্র পরিবারগুলো। এদিকে গুলিশাখালী ইউনিয়নে দুই হাজার দুই’শ ৮০ হতদরিদ্রদের নাম খাদ্য বান্ধব তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে কলাগাছিয়া গ্রামের ৫’শ ২০ পরিবার গত পাঁচ বছর ধরে এ সুবিধা পেয়ে আসছে।

গত পাঁচ বছর ধরে ওই গ্রামের হতদরিদ্র জাকির মোল্লা, মোর্শ্বেদা বেগম, হালিমা বেগম, সোহাগ মোল্লা, খাদিজা ও মামুন মোল্লার নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর মাসে তাদের চাল দেয়নি ডিলার আবু জাফর। ডিলার মোঃ আবু জাফর খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর কার্ড ও টাকা রেখে দিয়েছেন। বুধবার চাল বঞ্চিত জাকির মোল্লা, মোর্শ্বেদা বেগম, হালিমা বেগম, সোহাগ মোল্লা, খাদিজা ও মামুন মোল্লা ডিলার আবু জাফরের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাল না দেয়া ও কার্ড নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ইউএনও মোঃ কাওসার হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, আগে চাল পেতাম কিন্তু এ মাস থেকে চাল পাইনি। ডিলার কার্ড রেখে বলে দিয়েছে তালিকা থেকে নাম বাতিল করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেন নাম বাতিল করে দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে ডিলাররা বলতে অস্বীকার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন নির্বাচনের কারনে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা আমাদের নাম বাতিল করে তাদের কর্মী সমর্থকদের নাম তালিকায় অর্ন্থভুক্ত করেছেন।

গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের হতদরিদ্র জাকির মোল্লা, মোর্শ্বেদা বেগম, হালিমা বেগম, সোহাগ মোল্লা, ও মামুন বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে আমরা চাল পেয়েছি। কিন্তু এ মাসে ডিলার আবু জাফর তালিকায় নাম নেই বলে কার্ড নিয়ে চাল দেয়নি। হঠাৎ আমাদের নাম উধাও হয়ে গেছে। তারা আরো বলেন, ডিলার জাফর টাকা খেলে আমাদের নাম কেটে অন্য মানুষকে দিয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনও কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তারা।

একই গ্রামের খালিদা বেগম বলেন, চাউল দেয়ার কতা কইয়্যা টাহা ও কার্ড লইয়্যা গ্যাছে ডিলার আবু জাফর কিন্তু চাউল দ্যায় নাই। আগে চাউল পাইতাম তাতে ভালোই চলতাম। মুই গরিব মানু ক্যামনে চলমু হেইয়্যা কইতে পারি না।

ডিলার আবু জাফর ছয় পরিবারকে আগে চাল দেয়ার কথা স্বীকার এবং টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, এখন তাদের নাম বাতিল করে দেয়া হয়েছে তাই আমি চাল দেই নাই। কে তালিকা থেকে ছয় পরিবারের নাম বাতিল করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান ছয় পরিবারের নাম তালিকা থেকে বাতিল করে দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি ছয় পরিবারের নাম তালিকা থেকে বাতিল করে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ডিলার আবু জাফরের বিরুদ্ধে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর চাল বিতরনে বেশ অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ছয় হতদরিদ্র পরিবারকে ডিলার চাল দেয়নি বলে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানান তিনি।

গুলিশাখালী ইউনিয়ন খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর চাল বিতরন তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সৈয়দ মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোঃ কাওসার হোসেন বলেন, আমি বর্তমানে তালতলীতে আছি। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছি কিনা আমার জানা নেই। আগামীকাল আমতলী অফিসে গিয়ে বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এন/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১)