সাহিদুল এনাম পল্লব


দেশের নারীরা যাতে ঘরে ঘরে নির্যাতিত না হয়। তাদের অধিকার বাস্তাবায়িত হয় সহ বিভিন্ন দিক গুলি বিবেচনায় রেখে দেশে তৈরি হয়েছিল "নারী শিশু নির্যাতন ও যৌতুক নিরোধ আইন"। প্রতিটি আইনের ভাল মন্দ দিক থাকে। আইন বানান হয় রাষ্ট্র ও সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। তবে বাস্তবে দেখা যায় অনেক আইনেই অপব্যবহার রাষ্ট্র ও সমাজকে অস্থির করে তোলে। যারা আইন তৈরি করে তাদের খেয়াল রাখতে হবে যে এই আইনের যাতে অপব্যবহার না হয়।

প্রচালিত আইনে দেখা যায় আদালতে অভিযোগ কারিকেই প্রমাণিত করতে হয় যে ঐ ব্যক্তি অপরাধ করেছে। যার কারনে কোন নারী যদি একবার শারীরিক ধর্ষিত হয়। সেই ধর্ষণের বিচার পাইতে গেলে তার আরও অনেক বার হাজার মানুষের সামনে বারংবার ধর্ষিত হোতে হয়। নিজেকেই আদালতে, পুলিশের নিকট, ম্যজিস্ট্রেরের নিকট নিজের ধর্ষণের বর্ণনা বারংবার দিতে হয়। যার ফলে ঐ নারী মানসিক ভাবে লাঞ্জিত হোতে হোতে সে তার বিচার পাওয়ার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। অনেক সময় প্রকৃত ঘটনা ঘটলে ও আইন আদালতের এই ধরনের লাঞ্চনার ফলে অনেক মামলা মাঝ পথেই হারিয়ে যায় এবং আলোর মুখ দেখে না। কিন্ত আইনের দৃষ্টিতে কোন প্রকৃত দোষী ব্যক্তি কেউ দোষী প্রমান করা খুবই কষ্টসাধ্য বটে। তবে অনেক নারী সামাজিক রেষারেষি ও নিজ স্বার্থ চরিতার্থ কারার জন্য প্রচুর মিথ্যা সাজান মামলা করে থাকে। দেখা যায় এই মামলা গুলি মীমাংসার জন্য আসামী পক্ষের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আদালতে আবার তার নিজ ভুল স্বীকার করে আসামীদের খারিজের ব্যবস্থা করে দেয়।

আইনজীবী, পুলিশ সহ বিভিন্ন কলা কৌশলী দের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে আদালতে প্রায় ৯০% "নারী শিশু নির্যাতন ও যৌতুক নিরোধ আইন" মামলা মিথ্যা হোয়ে থাকে। যার কারনে পুলিশ, আদালত এই ধারার মামলা গুলি আসামীদের প্রতি নমনীয় দৃষ্টিতে দেখে। এই ক্ষেত্রে যারা আইন তৈরি করেছে তারা যদি আইনে কোন মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হোলে বাদীর জন্য শাস্তির বিধান রাখত তাহলে এই আইনের এত বেশী অপব্যবহার হোত না।

এই আইনের কারনেই নারীরা স্বামী ও স্বামীর বাড়ির লোক জনের নির্যাতনের সুযোগ লাভ করেছে। অনেক নারী বিবাহ হোয়ে স্বামীর বাড়ি আসার পর কয়েকদিন যেতে না যেতেই স্বামীর ভাই, বোন, মা-বাবার থেকে আলাদা হোয়ে পড়ে। স্বামীর বাড়ির লোক জনের ভঁয় দেখায় আমার কথা না শুনলে আমি তোমার সাথে সংসার করব না। শুধু সংসার করব না তাই বাবার বাড়ি চলে যাব যেতে তোমাদের নামে কোর্টে নারী নির্যাতন মামলা করব। তখন তোমরা বুঝতে পারবে তোমাদের কি অবস্থা হয় ? এই মামলা গুলিতে স্বামীর বাড়ির মা-বাবা, ভাই-বোন সহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের জড়িয়ে দেওয়া হয়। এই আইনের বিশেষ ধরন হোল মামলা হোলেই কোন ভাল মন্দ বিবেচনা না করেই জামিন হয় না তবে বাদী পক্ষের সাথে আপোষ করার সুযোগ থাকে। যার ফলে মামলার সুতার গুটি থাকে যে মামলা করেছে তার হাতে। এই সুযোগের কারনে নারী তার স্বামীর বাড়ীতে যাহা ইচ্ছা তাহা করতে পারে। তার ভঁয়ে স্বামীর বাড়ির সকলে ভঁয়ে থাকে। এই সুযোগ ব্যবহার করে নারীরা সংসারে বিভিন্ন প্রকার অপকর্মে লিপ্ত হোয়ে পড়ছে।

এই আইনের অপব্যবহারের ফলে নারীরা অবাধে জড়িয়ে পড়ছে পরকীয়ায়। পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়ার পর স্বামীর পরিবারের সদস্যরা বিষয়টা জানতে পারার পর তাকে কেউ কিছু বলতে ভঁয় পায়। দেখা গেছে স্ত্রীর পরকীয়া আছে স্বামী জানতে পেরেছে যখন তাকে তালাক দিতে যাচ্ছে তখন স্ত্রী হুমকি দিচ্ছে যে তাকে তালাক দিলে সে তার পরিবারের সদস্যের জড়িয়ে নারী শিশু নির্যাতন ও যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দিয়ে পরিবারের সকলের জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে । স্ত্রী এই হুমকির কারনে তার পরকীয়ায় বাঁধা দিতে পারছে না। তখন স্ত্রীর সমস্ত অপকর্ম অবগত হয়েও মামলার ভঁয়ে চুপ করে সহ্য করতে হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কে স্বামী কিছু বলতে পারছে না আবার সহ্য করতে পারছে তখন সে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। এর কারনে দেশে এখন পুরুষের আত্মহত্যা বেড়ে গেছে।

ছেলে কে বিবাহ দেবার পর অনেক পরিবারের পিতা মাতা চলে যাচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধাশ্রমের আগত দের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে এক সন্তানের জনক অনেক কষ্ট করে লেখা পড়া শিখিয়েছে। এখন সরকারি বড় অফিসার সংসারে মা বাবা কে নিয়ে অশান্তি লেগেই থাকে। কয়েক বার বেটার বউ শাশুড়ির সাথে ঝগড়া করে বাপের বাড়ীতে চলে গেছে। একবার থানায় অভিযোগ করেছিলাম থানা থেকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেলে আবার বউ মা থানা থেকে শর্ত সাপেক্ষে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে। থানার বড় অফিসার বলেছে ফের যদি এমন ঘটনা ঘটে চাকুরী চলে যাবে সাথে জেল হাজতে বসে পচতে হবে। আমার যাওয়ার জাইগা নেই আমি বড় বোঝা হয়ে গেছি তাই ছেলের সুখ শান্তির কথা বিবেচনা করে শেষে এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছি।

দিন দিন একই কারনে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে গড়ে উঠছে একক পরিবার। এখন আর তেমন দেখা যায় না যে বাবা মার সাথে ২/৩ ভাই বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে একই সংসারে অবস্থান করতে। বিবাহ হওয়ার পর কয়েক দিন যেতে না যেতেই সংসারে স্ত্রীর অশান্তি আমি এত লোকের রান্না করতে পারব না। তা না হোলে তোমার সাথে আমি সংসার করব না। সংসার করব না মানেই নারী নির্যাতন মামলা। তখন উপায় নেই ভেবেই ভেঙ্গে যাচ্ছে যৌথ পরিবার।

একক পরিবারের অন্য কারো প্রধান্য থাকে না। যার কারনে শিশুরা তার বাবা মা ছাড়া অন্য কার সম্মান করে না। অন্য কার শিশুকে কেউ খারাফ দেখলেও কিছু বলার নেই। যার কারনে শিশুরা এখন সমাজের আদপ কায়দা ভুলে যেতে বসেছে। এই আইনের অপব্যবহারের ফলাফল সামজে সুদুর প্রসারী। এই আইনের ল্যাগাম টেনে ধরতে হবে। নারী অপরাধ করলেও তার নামে মামলা হোতে হবে। প্রতিটি মামলা রেকর্ড হওয়ার আগে ভাল করে তদন্ত করে আসামী গ্রেফতার করতে হবে। মামলা হোলেই কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। এই মামলা জামিন অযোগ্য না করে সাধারন মামলার মত করতে হবে। প্রকৃত নির্যাতন করেছে কিনা তার ডাক্তারি পরীক্ষার উপযুক্ত প্রমান আসতে হবে। যাতে প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পায়। অযথা কেউ যেন হয়রানী না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই আইনের বলে শুধু সমাজের নিচু তলার মানুষ হয়রানী হচ্ছে না। হয়রানী হোতে হচ্ছে সমাজের অনেক উঁচু তলার মানুষের।

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক।