ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটনকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, এলাকার উন্নয়নে এবং কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে ড. লিটনের বিকল্প নেই।

ড. লিটনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মোহনের হাত ধরে যেমন শাহজাদপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ন অনেক পরিবর্তন এসেছে, তেমনি ড. লিটনকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা গেলেও এলাকায় যুগান্তকারী অনেক পরিবর্তন আসবে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং সরকার ও আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ে ভালো যোগাযোগ থাকায় তার পক্ষেই কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব। শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এমনটা জানিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৬ সংসদীয় আসন। সম্প্রতি সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে আসনটি শূণ্য হয়। আগামী ২ নভেম্বর শাহজাদপুর আসনে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। শাহজাদপুর উপজেলার অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি হলো দুগ্ধ এবং তাঁত শিল্প। করতোয়া নদীর পশ্চিমে দুগ্ধ শিল্প আর পূর্বদিকে তাঁত শিল্পের প্রাধান্য।

শাহজাদপুরে এই দুইটি শিল্পের বিকাশে যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি হলেন ড. লিটনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মোহন। তিনি শাহজাদপুরের পোঁতাজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের দুইবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালেই পোঁতাজিয়া ইউনিয়নে স্থাপন হয় বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা) এর সবচেয়ে বড় কারখানা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মোহনের হাত ধরে শাহজাদপুরে তাঁত শিল্পেরও বিকাশ হয়। তিনি পাকিস্থান আমলে তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন। তৎকালীন ভারতের বোম্বে (মুম্বাই) থেকে ডিজাইন নিয়ে এসে শাহজাদপুরে নিজের কারখানায় কাপড় উৎপাদন করতেন মোহন। তিনি সে সময়ে শাহজাদপুর বণিক সমিতির সভাপতিও ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একদিকে যেমন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থনৈতিকভাবেও সহযোগিতা করতেন।

আরো জানা যায়, আব্দুল মতিন মোহনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর সন্তান সাজ্জাদ হায়দার লিটনও শাহজাদপুরের মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করে চলেছেন। তার ঐকান্তিক চেষ্টায় শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। তাঁর বাবা আব্দুল মতিন মোহনের নামে রাস্ত, ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। নিজস্ব জমি ও অর্থায়নে স্কুল, ঈদগাহ, কবরস্থান নির্মাণ করেছেন।

জানা গেছে, গত দুই দশক ধরে জাতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন সাজ্জাদ হায়দার লিটন। তিনি গত ১৯ বছর ধরে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। বর্তমানে তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এর আগে ২০১২ সালে যুবলীগের কমিটি গঠন হলে সাজ্জাদ হায়দার লিটন আন্তর্জাতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরও আগে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন ড. লিটন। তিনি ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পাদক হওয়ার পরে সারা বিশ্বে যুবলীগের কর্মকান্ডে গতির সঞ্চার হয়। তিনি বিভিন্ন দেশ ঘুরে যুবলীগকে সংগঠিত করেন।

২০০৭ সালের আলোচিত এক এগারোর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাহসী ভূমিকা রাখেন সাজ্জাদ হায়দার লিটন। সেসময়ের বাস্তবতায় অনেক নেতা যখন গা ঢাকা দেন তখন তিনি রাজপথে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারামুক্তির আন্দোলন সংগ্রামে সামনের সারিতে ছিলেন। ঝুঁকি নিয়ে ও তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সাজ্জাদ হায়দার লিটন ধানমন্ডির সুধাসদনে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

শাহজাদপুরের বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাজ্জাদ হায়দার লিটনকে আগামী উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। ড. লিটনের পরিবার ও তাঁর নিজের রাজনৈতিক অবদান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মী বান্ধব রাজনীতি, সর্বপোরি জনসেবার মানসিকতাই তাঁকে প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রাখছে।

জানতে চাইলে শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবলা বলেন, ‘এবারের উপনির্বাচনে দুই পরিবারের তিনজন মনোনয়ন প্রত্য্যাশীর মধ্যে মূল লড়াই হবে। ’

সাজ্জাদ হায়দার লিটনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাঁর বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বর্তমানে ড. লিটন যুবলীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। এলাকাতেও তাঁর ভালো অবস্থান রয়েছে।’

পোঁতাজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনসার আলী বলেন, ‘লিটনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। পোঁতাজিয়া ইউনিয়নের টানা ৫ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা রাজনীতি করেছি। লিটন নিজেও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তাঁর বাবার অবস্থান এবং নিজের সাংগঠনিক পরিচয় সবমিলিয়ে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। আওয়ামী লীগ তাঁকে মনোনয়ন দিলে এলাকার সবাই তার পক্ষে কাজ করবে। তবে যদি কোনো হাইব্রিড নেতা মনোনয়ন পায় তাহলে আমরা কষ্ট পাব।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন বলেন, আমি এ মাটির সন্তান, পারিবারিকভাবেই আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত, যুবলীগের টানা তিনটি কমিটিতে গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করছি। একই সাথে নিজের সাধ্যমত এলাকার উন্নয়নেও ভুমিকা রাখছি।

তিনি আরো বলেন, আসন্ন উপ-নির্বাচনে আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী, এর আগেও দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাদের নমিনেশন দিয়েছেন তাদের পক্ষে মাঠে থেকেছি। আমি আশাবাদি এবার নেত্রী আমাকে মুল্যায়ন করবেন, নমিনেশন পেলে আমি বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদি।

ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন আরও বলেন, শাহজাদপুরবাসির সেবা করার পাশাপাশি এই অঞ্চলের আওয়ামীলীগকে আরো গতিশীল করতে আমি ভ’মিকা রাখবো। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত ঐতিহ্যবাহি শাহজাদপুরের তাঁত, দুগ্ধ শিল্পকে আরো উন্নত করার পাশাপাশি নদীভাঙ্গন রোধ, সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নয়নে সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করাই আমার অঙ্গিকার।

(আইএইচ/এএস/অক্টোবর ০৩, ২০২১)