মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : ঘনিয়ে আসছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯১৭ জন ভোটার অধ্যুসিত শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন। আর মাত্র দু’দিন পরই অর্থাৎ আগামী ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পর্যটন উপজেলা হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলার এই উপ-নির্বাচন। সময় যত গড়াচ্ছে নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে উত্তাপও তত ছড়াচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। 

এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভানু লাল রায়ের বিরুদ্ধে ভোটের দিন কেন্দ্র দখলের শঙ্কা ও নির্বাচনী প্রচারণায় হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ নিয়ে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী চা শ্রমিক নেতা, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রেমসাগর হাজরা ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মো. আফজল হক। এ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রেমসাগর হাজরা আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আর মো. আফজল হক ঘোড়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

সোমবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্যে বিদ্রোহী প্রার্থী (আওয়ামীলীগ) মো. আফজল হক অভিযোগ করে বলেন, এই নির্বাচনে প্রচারনার শুরু থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বিভিন্নভাবে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, যেকোন মুল্যে কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনে ভোট কারচুপি করে তিনি বিজয়ী হবেন। নৌকার প্রার্থী শ্রীমঙ্গল পৌরসভা ও শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের সকল ভোট সেন্টার দখল করার পায়তারা করছেন। যেহেতু শ্রীমঙ্গল উপজেলায় কোন দূর্গম এলাকা নেই,তাই আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবী জানাচ্ছি প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ভোট শুরু হওয়ার আধা ঘন্টা আগে ব্যালট পেপার যাতে কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়।

লিখিত বক্তব্যে মো. আফজল হক বলেন, আমরা লক্ষ করছি নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই আমাদের কর্মী সমর্থকদের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তার কর্মী সমর্থকদের দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। পাশাপাশি আমাদেরে প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে আসছেন। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, মিছিলের মাধ্যমে শহরজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে ভোটারদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এমন কর্মকান্ড সুষ্টু নির্বাচনের অন্তরায় বলে আমরা মনে করছি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, শ্রীমঙ্গল পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের সকল ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসন যেন এই কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনা করে। সাথে সাথে উপজেলার সকল ভোটে কেন্দ্রে বিজিবি মোতায়েন করার জোড় দাবী জানাচ্ছি, এবং শ্রীমঙ্গল পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের সব কেন্দ্রে আলাদাভাবে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করারও দাবী জানাচ্ছি।

শ্রীমঙ্গ উপজেলায় ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯১৭ জন ভোটারদের মধ্যে ৭০ হাজার চা শ্রমিক ও ৫হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির ভোটার রয়েছে। নির্বাচনে এই ভোটাররা বড় ফেক্টর। এই নির্বাচনে চা শ্রমিক ভোটাররা শান্তিপ্রিয় উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রেমসাগর হাজরা বলেন, এখানে চাবাগানের একটি বড় অংশ রয়েছে। তারা সবসময় জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আসছেন। তাদের ভোটাধিকারে যেন কোন অবস্থায় হস্তক্ষেপ না করা হয়। তাছারা শ্রীমঙ্গল শান্তির শহর, শান্তির উপজেলা। আমরা এই উপজেলা নির্বাচনে একটি সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে যদি ভোট কারচুপি করতে চায়,তাহলে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এবং এই পরিস্থিতির জন্য নৌকার প্রার্থীকেই দায়ী থাকতে হবে। সেজন্য প্রশাসনের কাছে আমাদের জোড় দাবী,এই নির্বাচনে প্রশাসন যেন কঠোর অবস্থানে থেকে ভোট কারচুপি হওয়া থেকে রক্ষা করে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কলম সৈনিক আখ্যায়িত করে ক্ষমতাসীন দলের এই দুই বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ভোটের আগেরদিন ও ভোটের পরের দিন আপনারা নির্বাচনকে সূষ্টু করে তুলতে জনগনের পাশে থাকবেন। জনগন যেন তাঁর ভোট পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারে। নির্বাচনে জনগন যাকে ভোট দিবে তাকেই আমরা চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেবো। কিন্তু যদি ভোটে কোন ধরনের কারচুপি করা হয় তাহলে আমরা সেটা মেনে নেবোনা।

উল্লেখ্য: আগামী ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন। এদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত উপজেলার ৮০ টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে। উপ-নির্বাচনে মোট প্রার্থী সংখ্যা চারজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী, উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) প্রার্থী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রেমসাগর হাজরা, স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) প্রার্থী উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মো. আফজল হক এবং জাতীয় পাটি প্রার্থী মিজানুর রব।

(একে/এসপি/অক্টোবর ০৪, ২০২১)