স্টাফ রিপোর্টার : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুচ্ছগ্রামের ঘড় নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই দুই কর্মকর্তার অনিয়মের তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন উপজেলার গালা ইউপি চেয়ারম্যান। অভিযোগে গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মাণে অনিয়ম করতে ও সুবিধাভোগীর তালিকা প্রস্তুতে চেয়ারম্যানের পরামর্শ না নিয়ে সরকার দল সমর্থিত এক ইউপি সদস্যকে প্রাধান্য দেওয়ারও উল্লেখ রয়েছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর শাহজাদপুরের গালা ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন।

সরেজমিন গুচ্ছগ্রাম ঘুরে, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠানো লিখিত অভিযোগসূত্রে জানা যায়, ২০২০ ইং সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের বৃহাতকোড়া মৌজায় একটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান ঘড় নির্মাণের উপযোগী করতে মাটি ভরাটের জন্য ৩০৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়। নিয়ম অনুযায়ি মাটি ভরাট প্রকল্পের পিআইসি গালা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন মাটি ভরাট কাজ শেষ করার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ আবুল কালাম আযাদ নিজেদের তত্বাবধানে ঘড় নির্মান কাজ শুরু করেন। প্রতিটি ঘড় নির্মানে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ব্যায় হিসেবে মোট ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয় ৫০ টি ঘড় নির্মানের জন্য।

ঘড় নির্মাণের সময় প্রকল্প সংশ্লিষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেনকে কোন কাজে সম্পৃক্ত না রেখে ঐ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেনকে সাথে নিয়ে ঘড় নির্মান করা হয়। নির্মাণ শেষে সুবিধাভোগীদের নিকট হস্তান্তরের আগেই ঝড়ে দুটি ঘড়ের চালা উড়ে গেছে। অধিকাংশ ঘড়ের সাথে লাগোয়া টয়লেট ব্যাবহারের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে।

লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, নির্মাণকৃত ঘড় বরাদ্দ প্রদানেও চেয়ারম্যান প্রদত্ত সুবিধাভোগির তালিকা গ্রহন না করে ঐ ইউপি সদস্যের দেয়া তালিকা গ্রহন করার প্রক্রিয়া চলছে। যে তালিকায় গালা ইউনিয়ন ব্যাতিত অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা ও স্বচ্ছল ব্যাক্তিরা রয়েছেন।

এ বিষয়ে বৃহাতকোড়া গ্রামের ভমিহীন কৃষক লালচান মিয়া বলেন, অত্যান্ত নিম্নমানের ঘড় নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দুটি ঘড়ের চালা উড়ে গেছে, টয়লেটগুলোও নিম্নমানের যা ব্যাবহারের অনুপোযোগী। আমরা ভাঙ্গনে ঘড়-বাড়ি হারিয়েছি, অথচ আমরা গুচ্ছগ্রামে ঘড় পাচ্ছি না। যাদের ঘড়-বাড়ি সব আছে বাইরের ইউনিয়নের মানুষ তাদের গুচ্ছগ্রামে ঘড় দেয়া হচ্ছে শুনেছি। আমরা এই অনিয়ম মানবো না।

গালা ইউপি’র ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবুল হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান ঐ কমিটিতে ছিল, নিম্নমানের ঘড় তোলা হয়েছে কিনা তা সেই বলতে পারবে, আমি কখনো প্রকল্প এলাকায় যাইনি।

অভিযোগকারী ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রকল্প, আমি মাটি ভরাট প্রকল্পের পিআইসি, অথচ ঘড় নির্মানে ও বরাদ্দ প্রদানে আমাকে সংশ্লিষ্ঠ রাখা হয়নি। ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা প্রতি ঘড় নির্মানে বরাদ্দ অথচ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় নিম্নমানের ঘড় নির্মান করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ঝড়ে দুটি ঘড় উড়ে গেছে। লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে ইউএনও ও পিআইও’র শাস্তি দাবি করছি।

শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ আবুল কালাম আযাদ গুচ্ছগ্রামের অনিয়ম বিষয়ে কথা বলতে রাজি না হয়ে ইউএনও’র সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা বলেন, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি এখনো চলমান রয়েছে, এ বিষয়ে এখন বক্তব্য দেয়া ঠিক হবে না।

(আই/এসপি/অক্টোবর ০৫, ২০২১)