ওয়াজেদুর রহমান কনক


‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ এই শব্দ গুলো একটার সাথে একটার এমন গভীর সম্পর্ক যে একটিকে জানলে অন্যটিও জানা হয়ে যায়। কেউ যদি বঙ্গবন্ধুকে জানতে চায়, তবে তার মুক্তিযুদ্ধটাও জানা হয়ে যায়। কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধকে জানতে চায়, তবে তার বাংলাদেশকেও জানা হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ যে এই তিনটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত হয়েছে, তাও কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক, আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ছাড়া তাঁদের মর্যাদা রক্ষা করার আর কেউ আছে কি ? রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করা চলে, কিন্তু ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’-এর কোন বিরোধীতা চলে না।

মুজিব বর্ষে দল-মত নির্বিশেষে যে যার অবস্থান থেকে স্মরণ করবে, এটাকে বাঁকা চোখে দেখার কিছু নাই। মুজিব বর্ষে অনেক জামায়াত-শিবিরের প্রতিষ্ঠানের সামনেও শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে । বিপত্তিটা আসলে অন্য জায়গায়। যখন ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে পুঁজি করে কেউ রাজনৈতিক ফয়দা লোটার চেষ্টা করবে বিপত্তিটা আসলে সেখানেই।

নতুন প্রজন্মের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে জানানো দ্বায়িত্বটা আসলে কার ? নিশ্চয়ই জামায়াত-শিবির এই দ্বায়িত্ব পালন করবে না। যদি তারা সেটা করেও তবে তারা কোন পয়েন্ট অব ভিউ থেকে নতুন প্রজন্মের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে জানানোর প্রয়াস চালায় অথবা চালানোর চেষ্টা করে সেটা বোঝার জন্য কি তাহলে শেষ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ হতে হবে !

ভোটের রাজনীতির জন্যই হোক আর অন্য যেকোন কারণেই হোক আওয়ামী লীগে যে অনুপ্রবেশকারীদের অস্থিত্ব বিদ্যমান, আশা করি একথা কেউ অস্বীকার করবে না। দুই একবার নৌকার টিকিট পেলেই যে সে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন হয়ে গেল, একথা বিশ্বাস করলে ক্ষতিটা আর কারো না হোক, ক্ষতিটা হবে আওয়ামী লীগের। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে সবাই এক কাতারে শামিল হলেও সবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এক ছিল না। বামপন্থীদের একটা অংশ ‘দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি’ আখ্যা দিয়ে শত্রু পক্ষ- মিত্র পক্ষ এই দুই পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এখন এদের কাছে থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প কেন শুনতে হবে ? কমিউনিস্ট পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আর নতুন করে কিছু বলার নাই । কমিউনিস্ট পার্টি বঙ্গবন্ধুর কোন মর্যাদাহানি ঘটায়নি। কমিউনিস্ট পার্টির কাছে থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা যেতে পারে, কিন্তু অন্যান্য দল গুলোর ক্ষেত্রে ? সব দলকেই কি কমিউনিস্ট পার্টির কাতারে ফেলা যায় ?

স্বাধীনতা পূর্ববতী সময়ে যারা ছাত্রলীগ/ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে না থেকে এনএসএফ-এর সাথে রাজনীতি করেছে, তাদের কাছে থেকে কি রকম মুক্তির সংগ্রামের গল্প আশা করা যায় ! স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাসদের ভূমিকা কি ছিল, তারা কি রকম মুক্তির সংগ্রামের গল্প মানুষকে শোনাতে চায় ! স্বাধীনতার পর প্রায় দুই দশক যারা আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি করে পৌর চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছে তারা কেমন মুক্তিযুদ্ধকে জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে। যারা আপাদমস্তক একজন জাত আওয়ামী লীগারের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে পারে, তারা কেমন মুক্তিযুদ্ধকে জানাতে আসছে ! নৌকার মনোনয়ন না পেলে যারা ‘বিদ্রোহী’ হয় এরা আবার কেমন মুক্তিযুদ্ধের কথা জানাতে চায় !

আগামী ৯ অক্টোবর নীলফামারীতে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানো’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। ইতিমধ্যে শহরের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারে গেছে। ৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নীলফামারী সফর করে গেছেন। আর তিনদিন পরের এই অনুষ্ঠানেও তাঁর উপস্থিত থাকার কথা পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে। সাথে বিশেষ অতিথি হিসেবে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের নামও ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে, অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত থাকবেন কি না একথা স্পষ্ট করে আওয়ামী লীগের কেউ বলছে না।

‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’-এর মর্যাদা অন্য কেউ এসে রক্ষা করবে না, কেউ না। যদি মর্যাদা রক্ষা করতে হয়, তবে আওয়ামী লীগকেই এগিয়ে আসতে হবে। ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে পুঁজি করে ফয়দা লোটার চেষ্টা রুখে দিতে পারবে কি আওয়ামী লীগ ?

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।