এটিএম রাশেদুল ইসলাম, বগুড়া : অভিযোগ উঠেছে মহিলা আওয়ামী লীগের বগুড়া জেলা কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছে টাকার বিনিময়ে। কোনদিন আওয়ামী লীগ না করেও সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়ায় এই অভিযোগ তুলেছেন সদ্য বিদায়ী বগুড়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরাইয়া নিগার সুলতানা ডরোথী। অন্যদিকে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আমি স্কুল জীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি বলেন আমার জন্মই আওয়ামী পরিবারে।

গত শনিবার (২ অক্টোবর) বগুড়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বগুড়া জিলা পরিষদ মিলনায়তনে। সম্মেলন শেষে হেফাজত আরা মিরাকে সভানেত্রী এবং সাবিহা সাবরিন পিংকিকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে গঠিত জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এদিকে নতুন কমিটি ঘোষণার পর গত মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুরাইয়া নিগার সুলতানা ডরোথী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নতুন কমিটি নিয়ে অভিযোগ করেন (তার লেখাটি হুবহু উদ্ধৃত হলো)-

“গণতন্ত্রের মানস কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্ব সময় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে আসছেন। সেখানে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড নেত্রীদের নিয়ে কী করে কমিটি গঠন করেন?

গত ২ অক্টোবর ২০২১ বগুড়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন স্থানীয় জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উদ্বোধক হিসেবে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সাফিয়া খাতুন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম উপস্থিত ছিলেন। প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনের শুরুতেই সভাপতি পদের প্রার্থীদের নাম আহবান করলে ৪জন প্রার্থী হিসেবে নাম দেন। সমঝোতার ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী নাম ঘোষণা করলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় উপস্থিত কাউন্সিলর এর মধ্য থেকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক প্রার্থিতা আহবান করেন। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক এবং অর্থের বিনিময়ে সাধারণ সম্পাদক পদে আরও ৮ জন প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। উক্ত প্রার্থীর মধ্যে সাবিহা সাবরিন পিংকি সরকার বগুড়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাথে কখনোই সংশ্লিষ্ট ছিল না এই বিষয়টি বগুড়ার সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী অবগত, সে বর্তমানে একজন হাইব্রিড নেত্রী। তার পরেও সংবিধানের বিধান অনুযায়ী কাউন্সিলর না থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বৃন্দ সম্পূর্ণ অন্যায় অসত্য পন্থায় সংগঠনের বিধিবিধানকে তোয়াক্কা না করে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে সাবিহা সাবরিন পিংকি সরকারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন।

আমরা জানি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে সংগঠন পরিচালিত হয়ে থাকে। অথচ বগুড়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ গঠনে তৃণমূলকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পন্থায় পরিচালিত হয়ে থাকে। গণমানুষের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সারাদেশের নেতাকর্মীদের বিশ্বাস আস্থা আছে। সংগঠনের সম্মানিত সভাপতি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমার আকুল আবেদন এই অবৈধ ও অসাংবিধানিক কমিটিকে অনুমোদন না দিয়ে পুনরায় গণতন্ত্র অনুযায়ী তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করার অনুরোধ করছি। যে কমিটি আগামী দিনের সকল অন্যায় অবিচার ও স্বাধীনতাবিরোধীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।

আমার বাবা মরহুম ডাক্তার গোলাম সারওয়ার ১৯৭০ সালের তৎকালীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-ধনুট-নন্দীগ্রাম আসনের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ সহচর হিসেবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ভাষা সৈনিক ছিলেন। আমার বাবা মরহুম ডাঃ গোলাম সরওয়ার সাহেব আশির দশকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আশির দশকে স্কুল জীবন থেকেই বাবার হাত ধরে আমার রাজনীতিতে পদার্পণ। আমার পরিবারের সকলে অদ্যতক পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছেন। অথচ অগণতান্ত্রিক পন্থায় অন্যায় লাভের মাধ্যমে শুধুমাত্র আমাকে নয়, আমার মত অসংখ্য নেতাকর্মীদের মনে আঘাত দিয়েছেন যা কখনো ভুলে যাওয়ার নয়। আমি দলের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখি এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একমাত্রআশ্রয়স্থল গণতন্ত্রের মানস কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ।”

এদিকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে গত মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) ২১ সদস্যের একটি আংশিক জেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এই আংশিক কমিটি নিয়ে অভিযোগ তোলেন সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি হেফাজত আরা মিরা।

তিনি বলেন, নতুন সাধারণ সম্পাদক সাবিহা সাবরিন পিংকি আমাকে না জানিয়ে কমিটি অনুমোদন করে নিয়েছে। যারা কোনদিন আওয়ামী লীগ করেন নি এবং মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এমন নারীকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে সাধারণ সম্পাদক সাবিহা সাবরিন পিংকি বলেছেন, বগুড়া জেলা কমিটি হবে ৯১ সদস্যের। প্রাথমিক ভাবে ২১ জনের একটি কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সাবেক সাধারণ সস্পাদকের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার দাদা, বাবা, মা এবং চাচা সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থেকে রাজনীতি করেছেন। আমি স্কুল জীবন থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী। আমি স্কুল ড্রেস পরেও সাতমাথায় আওয়ামী লীগের মিছিল করেছি। আমার মা মহিলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটিতে শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৮ সালে আমাকে সেই কমিটিতে কো-অপ্ট করা হয়।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুরাইয়া নিগার সুলতানা ডরোথী বলেন, শুধু সাধারণ সম্পাদক নয় পুরো কমিটি নিয়েই আমার অভিযোগ রয়েছে। এই কমিটি বিধি সম্মত হয়নি। সে কারণেই আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি।

(এআর/এসপি/অক্টোবর ০৭, ২০২১)