ইমাম উদ্দিন সুমন, নোয়াখালী : ফের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এক বিএনপি নেতার মার্কেট ভাঙার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় অন্তত ১২ জন ব্যবসায়ী আর্থিক ভাবে লোকসানের মুখে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে দোকানের মালামাল সহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) সকাল থেকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বসুরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদী সুপার মার্কেটের একটি অংশে এ ভাংচুর চালানো হয়।

মার্কেটের মালিক বেলায়েত হোসেন স্বপন জানান, আমার ভাই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই সেলিমসহ আমরা পারিবারিক ভাবে ১৯৯৮ সালে একটি আধুনিক মার্কেট নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্ল্যানসহ কাগজপত্র বসুরহাট পৌরসভায় দাখিল করলে আবশ্যকীয় তদন্ত শেষে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র উক্ত প্ল্যান অনুমোদন করে। প্ল্যান অনুমোদনের পর ১৯৯৯ সালে প্ল্যান মোতাবেক আমরা দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ করি। এ মার্কেটের নিচ তলায় ক্রেকারিজ, ঔষধ, লাইব্রেরী, কাপড় দোকান, কসমেটিক্স দোকান, ইলেকট্রনিক্স শোরুমসহ। ২য় তলায় উত্তরা ব্যাংক, চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স শোরুম আছে। ২২ বছরের ওপরে এ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছে।

তিনি আরো জানান, ২০২০ সালের শুরুর দিকে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা আমাদের মার্কেটের কিছু অংশ সরকারি জায়গায় পড়েছে বলে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠির বিরুদ্ধে আমরা জেলা সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করি। পরে ওই বছরের ৩ মার্চ আদালত থেকে মার্কেটের বিষয়ে ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার জন্য আদেশ জারি করা হয়। যা এখনো বলবৎ আছে।

স্বপন অভিযোগ করেন,কিন্তু বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা প্রতিহিংসা বশত আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পেশিশক্তি দিয়ে তার অনুসারীদের দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে অবৈধ ভাবে শুক্রবার সকালে আমাদের মার্কেটের ১০ফুট অংশ ভেঙ্গে দেয়।

বেলায়েত হোসেন স্বপন অভিযোগ করে আরো জানান,গত ৩০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবর আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোহাম্মদী সুপার মার্কেট ভেঙ্গে ফেলা হবে মর্মে হুমকি প্রদানের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার
চেয়ে লিখিত অভিযোগ করি। এরপর আজ সকালে মার্কেট ভাঙ্গা শুরু হলে এ ঘটনা নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো.খোরশেদ আলম খান, নোয়াখালীর এসপি মো.শহীদুল ইসলাম ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাইফুদ্দিন আনোয়ারকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।

এ বিষয়ে জানতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে শুক্রবার দুপুরে ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করা হয়নি। তাই এ অভিযোগের বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, এ বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। ওই মার্কেট না ভাঙার জন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার বিষয়টি থানা-পুলিশের একটি দল কাদের মির্জাকে অবহিত করে। এই বিষয়ে পুলিশের যা করণীয়, পুলিশ তা–ই করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলামের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান জানান, ভাংচুর করা হচ্ছে বলে এক ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন। আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলে আমরা আদালতের মাধ্যমে ব্যাকেট করে আমরা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম করব।

উল্লেখ্য, এর আগে গত শুক্রবার ( ২৪ সেপ্টেম্বর) বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বসুরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ন টিম্বার মার্সেন্ট অ্যান্ড সমিল নামে একটি ব্যবসা
প্রতিষ্ঠানে উচ্ছেদ অভিযান চালায়।

(এস/এসপি/অক্টোবর ০৮, ২০২১)