নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পাখির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কাশিমপুর ইউনিয়নের সর্বরামপুর ও গোনা ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রাম। প্রতিদিনই এসব পাখি দেখতে ভিড় করছেন অনেক পাঁখি প্রেমি মানুষ। আবার অনেকেই গ্রামবাসীর অজান্তে পাখি শিকার করছেন। যদিও বা কেউ পাখি শিকার করতে আসলে গ্রামবাসির তোপের মুখে অনেকেই পালিয়ে যান। গ্রামবাসীর দাবী যদি সরকারি ভাবে পাখিগুলো সংরক্ষনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতো তাহলে হয়তো বা এই দু’টি গ্রাম পাখির অভয়ারন্যে পরিণত হতো। আর নিরাপদেই হাজার হাজার পাখি এখানে প্রজনন করে বংশবিস্তার করতে পারতো।

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যরে আরেকটি অপরূপ আকর্ষন হিসেবে এই দুটি গ্রামের বড় বড় গাছে কয়েক বছর ধরে বাস করছে শামুকখোল ও তার একাধিক প্রজাতি এবং বকসহ কয়েকটি প্রজাতির প্রায় কয়েক হাজার পাখি। সারাক্ষণ চলে ওদের ডানা ঝাপটানো ও দল বেধে উড়ে যাওয়া আবার গাছে বসা। কেউ বা উড়ে যাচ্ছে খাবার সংগ্রহ করতে। আবার কেউ খাবার মুখে করে খাবার নিয়ে এসে তুলে দিচ্ছে বাচ্চার মুখে। সারাদিন চলে তাদের এমন কর্মযজ্ঞ। সন্ধ্যার একটু আগে থেকে এই অঞ্চলটি মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কল-কাকলিতে। নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে আবার ভোর হলেই খাবারের সন্ধানে উড়ে যায়। দিনশেষে আবারও তারা নীড়ে ফিরে আসে। কিন্তু মাঝে মাঝে পাখি দেখতে আসার নামে কতিপয় ব্যক্তি সবার অজান্তেই গুলি করে পাখি শিকার করার ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে করে ভয়ে অনেক পাখিই অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বর্তমানে আমাদের কাছে এই পাখিগুলো আমাদের পরিবারের সদস্যে পরিণত হয়েছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামে প্রবেশের আগেই যদি সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন ও সচেতনতামূলক কিছু পোস্টার, ব্যানার কিংবা সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে এই অঞ্চলকে পাখির অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা করা হয় তাহলে হয়তো বা পাখি শিকার কমতো আর আগামীতে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রজাতির পাখিগুলো এই অঞ্চলেই প্রজনন ও বংশবিস্তার করতে পারতো।

দর্শনার্থীরা বলেন, লোকমুখে শুনে এই পাখিগুলো দেখতে এসেছি। হাজার পাখির সমাবেশ খুব সুন্দর লেগেছে। কিন্তু পাখিগুলোর নিরাপত্তার জন্য সরকারি ভাবে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন কামনা করছি। সঠিক পদক্ষেপই হয়তো বা একদিন এই হাজার হাজার পাখিগুলোকে জাতীয় সম্পদে পরিণত করতে পারবে।

উপজেলা প্রকৃতি ও পাখি সংরক্ষন কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক এসএম সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে বিলুপ্ত প্রায় এই পাখিগুলোর টিকে থাকা বেশ জরুরী। কিন্তু আমরা অনেক মানুষই নির্বিচারে বিলুপ্ত প্রায় এই পাখিগুলো শিকার করছি যা আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। তাই এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।

এ ব্যাপারে রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, আমি নিজে ওই পাখির অঞ্চল পরিদর্শন করবো। এছাড়া এই পাখিগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকেই এই সম্পদগুলো রক্ষা করতে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। এই পাখিগুলোর নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

পর্যটকদের সচেতননা, স্থানীয়দের পাশাপাশি সরকারের দ্রুত পদক্ষেপই পারে হাজার হাজার পাখির নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে। যদি এই পাখিগুলো এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও আর মানুষের ভালোবাসা পায় তাহলে হয়তো বা পাখিগুলো এখানেই তাদের ভবিষ্যৎ প্রজনন ও বংশবিস্তারের আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিতে পারতো, এমনটাই আশা সচেতন মহলের।

(বিএস/এসপি/অক্টোবর ১১, ২০২১)