আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে তালেবান। আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তালেবান নেতা মোল্লা আমির খান মুত্তাকি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) তিনি দোহায় ইইউ-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে জানা গেছে এ তথ্য।

মোল্লা আমির খান মুত্তাকি জানিয়েছেন, তারা বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। ইতো মধ্যে কিছু বৈঠক হয়েছে। সবগুলোই ইতিবাচক বৈঠক বলে জানান তিনি। মুত্তাকি আরও বলেন, আমরা একটা ভারসাম্যের নীতি নিয়ে চলতে চাই। একমাত্র এই নীতিই আফগানিস্তানকে স্থিরতা দিতে পারে।

ইইউ-র মুখপাত্র নবিলা মাসরালি বলেন, আলোচনার মানে এটা নয় যে, ইইউ আফগানিস্তানকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নারীদের অধিকার নিয়ে কথা হবে, আফগানিস্তানকে সাহায্য দেয়া নিয়েও কথা হবে।

এর আগে প্রথমবারের মতো তালেবানের নতুন সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। কাতারের দোহায় স্থানীয় সময় শনিবার ও রোববার অনুষ্ঠিত হয় এ বৈঠক। এরপর জার্মানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয় সোমবার। সেখানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য বিশেষ জার্মান প্রতিনিধি মার্কাস পটজেলও ছিলেন। তিনিই এখন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন।

আলোচনার পর জার্মান প্রতিনিধিরা জানান, আফগানিস্তানে তালেবান এখন বাস্তব। মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছে। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে এখনো যে জার্মান নাগরিকরা আছেন এবং যে সব আফগান নাগরিকদের প্রতি জার্মানির বিশেষ দায়িত্ব আছে, তারা যাতে নিরাপদে কাবুল ছাড়তে পারে তা নিয়ে কথা হয়েছে। জার্মানির প্রতিনিধিরা মানবাধিকার ও বিশেষ করে নারীদের অধিকার রক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন।

এর আগে, তালেবানের সঙ্গে বৈঠকে ‘স্পষ্ট ও পেশাদার’ আলোচনা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র আরও জানায়, তালেবানকে কথা দিয়ে নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, চলতি সপ্তাহে দোহা আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের নিরাপদে ফেরার নিশ্চয়তার বিষয়গুলো নিয়ে। এছাড়া আফগানিস্তানের সমাজ ব্যবস্থায় সবক্ষেত্রে নারীদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণসহ মানবাধিকার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে আলোচনায়।

২০ বছরের আফগানযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে গত ৩১ আগস্ট দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহার সমাপ্তি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এক লাখ ২৪ হাজার আমেরিকান এবং আফগান দোভাষীকে। কিন্তু সময়মতো লোকজন সরাতে না পেরে ঝুঁকির মধ্যে পড়েন আফগান দোভাষীরা, যারা গত ২০ বছর ধরে আমেরিকা ও তাদের মিত্রদের সহযোগিতা করেছেন।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল গত ১৫ আগস্ট দখল করে নেয় তালেবান। এরপর থেকে অরাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশটির অর্থনীতিতে ধস নেমে আসে। কার্যত অচল হয়ে পড়ে গোটা দেশ। বন্ধ হয়ে যায় বিদেশি সহায়তা। খাবারের সংকটে পড়ে আফগানরা তোশক-বালিশও বিক্রি করেছেন এমন খবরও পাওয়া গেছে। তালেবানের নতুন সরকারের এক মাস হয়েছে। তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ১২, ২০২১)