সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : কুমিল্ল­া, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালি, সিলটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পবিত্র কোরান শরীফ অবমাননার অভিযোগে যেভাবে দুর্গা মন্দির, প্রতিমা ও প্যাণ্ডেলসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও কয়েকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যকে হত্যার ঘটনার  প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে আশাশুনি- সাতক্ষীরা সড়কে ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসুচিতে সভাপতিত্ব করেন জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ। বক্তব্য রাখেন জেলা মন্দির সমিতির সহসভাপতি অ্যাড. সোমনাথ ব্যানার্জী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: সুশান্ত ঘোষ, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আনিসুর রহিম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহম্মেদ বাপ্পি সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আলী সুজন, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যাণার্জি, দীপ্ত টেলিভিশনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রঘুন্থা খাঁ, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর সরকার, বাসদ নেতা অধ্যাপক নিত্যানন্দ সরকার, জেলা মন্দির সমিতির সহ-সম্পাদক বিকাশ চন্দ্র দাস, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাতক্ষীরা শাকার সভাপতি আঞ্জুয়ারা বেগম, সাধারণ সম্পাদক জ্যোস্না দত্ত, মানবাধিকার কর্মী লুইস রানা গাইন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দুর্গাপুজা চলাকালিন কুমিল­ার নানুয়ার দীঘির পাড় মন্দিরের দুর্গা প্রতিমার পাশে থাকা মাটির তৈরি হনুমানের উরুর উপরে পরিকল্পিতভাবে রেখে দেওয়া একটি কোরআনকে নিয়ে কুমিল­া, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালি, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে মন্দির, প্রতিমা, হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর, শতাধিক হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষজন ও পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে তা কোন স্বাধীন দেশের সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না। অথচ বাংলাদেশ থেকে হিন্দু শূন্য করার পরিকল্পিত চক্রান্ত হিসেবে কোরান অববমাননার দোহাই দিয়ে একটি মুসলিম মৌলবাদি গোষ্ঠী বর্বরোচিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। এমনকি বিজয়া দশমীর দিন শুক্রবার পড়ায় জুম্মার নামাজের পর চট্ট্রগাম ও নোয়াখালির বেগমগঞ্জে আটটি মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় যতন সাহা নামের একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপরও ফেইসবুকে যেভাবে এসব ঘটনার মিথ্যাচার করা হচ্ছে তাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যথাযথ তদন্ত না করেই ভোলার পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতিকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রসরাজের বাড়িসহ এলাকার সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হলেও তদন্তে রসরাজ এর পরিবর্তে জাহাঙ্গীর হোসেন নামের একজন জড়িত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

তাছাড়া সুনামগঞ্জে হেফাজত নেতা মোমিনুল হকের বক্তব্যকে ঘিরে সমালোচনা করে ফেইসবুকে স্টাটাস দেওয়ায় ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ঝুড়ন দাসকে ছয় মাস জেল খাটতে হয়েছে। হেফাজত নেতা কর্মীরা ওই এলাকার হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে। এ সবের পিছনে জড়িতদের অনেকেই রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ২০১২ সালে কালীগঞ্জের ফতেপুর হাইস্কুল মাঠে মহানবীকে কটুক্তির মিথ্যা অভিযোগে ফতেপুর ও চাকদাহে ১২টি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা আজো তদন্ত চলছে। চার্জশীটভুক্ত আসামী জিএম নূর ইসলামসহ একটি মহল এতটাই প্রভাবশালী যে চার্জশীট হওয়ার সাত বছর পর ওই মামলা পূণঃ তদন্তে আসার পর তারা মামলা থেকে বাঁচতে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে তদ্বির অব্যহত রেখেছেন। ফতেপুর চটাকদহের সহিংসতাসহ আশাশুনির প্রতাপনগর, দেবহাটার টিকেট, সদরের বাবুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ইতিপূর্বে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় দোষীরা শাস্তি না পাওয়ায় হামলাকারিরা আজো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বক্তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্সা আইন বাস্তবায়ন ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা নিষ্পত্তি করার আবেদন জানান। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত।

(আরকে/এএস/অক্টোবর ১৭, ২০২১)