এটিএম রাশেদুল ইসলাম, বগুড়া : শারদীয় দুর্গা পূজায় মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক ষড়যন্ত্রমূলক নাটকীয় ধর্ম অবমাননার ইস্যু সৃষ্টি করে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বগুড়ায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় সকাল সাড়ে এগারোটায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি মির্জা আহসানুল হক দুলাল। প্রতিবাদী কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাদেকুর রহমান সুজন, জেলা কমিটির সহ-সভাপতি নিভা রানী সরকার, জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাশেদ, জেলা নেতা খালেকুজ্জামান রাজা, শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম দাস, আজিজুল হক কলেজ কমিটির নেতা তানজিম, জেলা জাসদ নেতা দানা তালুকদার, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি ওবায়দুল হক, সাধারণ সম্পাদক সামিউল বারী রবি, বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না, সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী, সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক বাবলা, সাংস্কৃতিক জোট নেতা আব্দুল আলীম, অশ্রু, বগুড়া থিয়েটারের অলক পাল, রবিউল, সঙ্গীত শিল্পী প্রণব স্যানাল সহ বগুড়ার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ।

বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক দেশ বাংলাদেশ। এদেশে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর থেকে দেশে মৌলবাদের উত্থান ঘটে যা ২০২১ সালেও ক্রমবর্ধমান ভাবে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁচেছে। বিচারহীনতার সুযোগে বিভিন্ন সময় দেশব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুমিল্লায় কোরান অবমাননার নাটকীয় অযুহাত তৈরি করে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গা পূজা মন্ডপে হামলা করা হয় এবং তারপর তা নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রংপুর সহ দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চলতে থাকে। এসব সুপরিকল্পিত সন্ত্রাস প্রতিহত করতে ব্যার্থতার দায় সরকার এড়াতে পারে না। দুঃখজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের সরকারে ক্ষমতাসীন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায় আজ বিপন্ন। বিগত বছর গুলোতে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কমে যাওয়া এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড সক্রীয় না থাকার সুযোগে দেশে মৌলবাদী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাহস জুগিয়েছে। ওয়াজের নামে এক গোত্রের মৌলবাদী দেশের সহজসরল ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সংকীর্ণতা ও উগ্রতার বিষ ঢেলে দিচ্ছে। এসব উগ্র মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লক্ষণীয় সরকারী ব্যাবস্থা দৃষ্টিগোচর হয়নি। দেশে যত্রতত্র মাদ্রাসা তৈরী করে বিভিন্ন সময় উগ্র কর্মকান্ডে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার লক্ষণীয়, যা ২০২১ সালেও দুর্গা পূজা মন্ডপ ও মন্দিরে হামলায় দেখা গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশবাসী আজ শঙ্কিত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাংলাদেশের মানুষ সবাই একসঙ্গে মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এদেশ কখনোই মৌলবাদের উর্বর ভূমি হতে দেয়া হবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

(এটিআর/এসপি/অক্টোবর ১৯, ২০২১)