ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বুধবার দুপুর ৩টা থেকে ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সে:মি: উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ সইতে না পেরে তিস্তা ব্যারেজ রক্ষায় উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত ফ্লাড ফিউজ বাঁধের ২শত মিটার ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া তিস্তা নদীর একটি বাঁধের ৭০ মিটার ও অপর ২টি বাঁধ সম্পূর্ণভাবে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এতে করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ডিমলা উপজেলার প্রায় ৮ হাজার মানুষ। 

মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে। এরপর বুধবার ভোর ৬টায় নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তার পানি। হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, উজানের পাহাড়ী ঢলে মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। বুধবার সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরবর্তীতে দুপুর ৩টায় পানি বেড়ে ৭০ সেন্টিমিটার মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষজনের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে।

এদিকে পানির প্রচন্ড চাপে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিস্তা ব্যারেজ রক্ষায় উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত ফ্লাড ফিউজ বাঁধের ২শত মিটার ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া সকাল ৯টার দিকে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাঁধের ৭০ মিটার নদী গর্ভে ধ্বসে পড়ে। ফলে এ এলাকার ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এখনও এ এলাকার বাড়ী-ঘর প্রায় বুক পরিমাণ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন তার ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিতে বন্দী হয়ে আছে।

একই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের স্বেচ্ছায় নির্মিত বাঁধ ও স্বপন বাঁধ পানির প্রচন্ড চাপে ধ্বসে গেছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, তার এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক বাড়ী-ঘর এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। এসব বাড়িঘরের মানুষজনকে এখনও সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়াও একই উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপা খড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি ও জলঢাকা উপজেলার ৭টি চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় সহস্রাধিক মানুষ এখনও পানি বন্দী হয়ে আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। রেড এ্যালার্ট জারী করে মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

(ওকে/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০২১)