ফিচার ডেস্ক : মিরাকেলই বলা চলে। ৭০ বছর বয়সে সন্তান জন্মদানের ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। এমন একটি বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়েছে পশ্চিম ভারত। সেখানে ইন ভিট্রো ফার্টেলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতির মাধ্যমে বয়স্ক এক দম্পতি সম্প্রতি তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীর বয়স ৭০ বছর। গুজরাট প্রদেশের ভুজ শহরের স্ত্রীরোগের বিশেষজ্ঞ ডা. নরেশ ভানুশালি বলেন, জিভুবেন বাল্লাভাই রাবারি তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। আইভিএফ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে ওই নারী গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।

সম্প্রতি ডেইলি মেইল, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই খবর প্রচার করা হয়। ডা. নরেশ ভানুশালি বলেন, এটি একটি বিরল ঘটনা। আপনারা এটাকে মিরাকেলও বলতে পারেন। আমি প্রায় ২০ বছর ধরে প্র্যাকটিস করছি এবং প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষকে আইভিএফ ট্রিটমেন্ট দিয়েছি। কিন্তু এমন ঘটনা আমি এর আগে দেখিনি।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে সফল হতে পেরে আমরা বেশ খুশি। তবে বেশি বয়সে লোকজনকে সন্তান না নেওয়ার বিষয়েই উৎসাহ দিয়েছেন তিনি। হাসপাতালের রেকর্ড থেকে ওই নারীর বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ওই নারী তার বয়স ৭০ বলেই উল্লেখ করেছেন।

রাপার গ্রামের বাসিন্দা জিভুবেন জানতেন বেশি বয়সে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু তবুও তিনি চিকিৎসকদের বার বার অনুরোধ করেন যেন তার চিকিৎসা করা হয়। একটি সন্তানের জন্য তিনি অধীর হয়ে উঠেছিলেন।

ডা. নরেশ ভানুশালি বলেন, আমি তাকে বলেছিলাম যে আপনার অনেক বয়স হয়ে গেছে। আর এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কিন্তু তিনি এ কথা শুনতে চাচ্ছিলেন না। তিনি কাঁদতে শুরু করেন এবং বলেন, আমি যদি মারাও যাই তারপরেও আমি অন্তত এটা নিয়ে খুশি হবো যে আমি চেষ্টা করেছি।

হার্স আভিএফ সেন্টার অ্যান্ড ভানুশালি নার্সিং হোমে ওই নারীর চিকিৎসা করা হয়। ডা. ভানুশালি বলেন, ওই নারীর পরিবারের চার সদস্য তার কাছেই আইভিএফ ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে সন্তান ধারণে সক্ষম হন। দেড় বছর আগে সে কারণেই অনেক আশা নিয়ে তার কাছে চিকিৎসা করাতে আসেন জিভুবেন।

ওই চিকিৎসক বলেন, আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে, তার পরিবারের যেসব সদস্য চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের সবার বয়স ৪৫ থেকে ৫০-এর মধ্যে ছিল। সে কারণেই তাদের আইভিএফ ট্রিটমেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমি তাকে নেতিবাচক কথাই বলেছিলাম এবং তার জীবনের ঝুঁকি আছে বলেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এতোটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন যে আমি চিকিৎসা শুরু করতে বাধ্য হই।

কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই তিনি গর্ভধারণ করতে সক্ষম হন। তবে তিনি যখন আট মাসের অন্তঃস্বত্বা তখন তার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। সে কারণে এক মাস আগেই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই তিনি একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। শিশুটির নাম রাখা হয়েছে লালু। জন্মের পর ১৫ দিন তাকে এনআইসিইউতে রাখা হয়। এরপরেই মা এবং ছেলে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি পায়।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০২১)