রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কুমিল্লা, নোয়াখালি, চট্ট্রগ্রাম, ফেনি, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দুর্গা প্রতিমা,মন্দির, ইস্কন মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদের দেশব্যাপি কর্মসুচির অংশ হিসেবে সাতক্ষীরায় গণঅনশন, গণ অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এ কর্মসুচি পালিত হয়। পরে তারা এক বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করে।

গণ অনশন ও বিক্ষোভ কর্মসুচি পালনকালে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ও সাতক্ষীরা -১ আসনের সাংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ, রাধাশ্যামসুন্দর মন্দিরের অধ্যক্ষ কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, জয় মহাপ্রভু সেবক সংঘের সভাপতি গোষ্ট বিহারী মণ্ডল, সাংবাদিক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ মাইনরিটি হিউম্যান রাইটস মিডিয়া ডিফণ্ডার ফোরামের সভাপতি রঘুনাথ খাঁ, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা মন্দির সমিতির সহসভাপতি অ্যাড. সোমনাথ ব্যানার্জী, উদীচির জেলা সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আনিসুৃর রহিম. জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক কাজী আক্তার, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন, নিত্যানন্দ আমিন, বিকাশ দাস, বিমল গাইন, বিশ্বরুপ ঘোষ, শিক্ষক জয়দেব বিশ্বাস, ডাঃ মিলন কুমার ঘোষ, মিলন রায়, চৈতালী মুখার্জী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দুর্গাপুজা চলাকালিন মহাষ্টমীর দিনে কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাড় মন্দিরে পরিকল্পিতভাবে রেখে দেওয়া একটি কোরআনকে নিয়ে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালি, ফেনী, রংপুরসহ দেশের কমপক্ষে ১৫টি জেলার মন্দির, প্রতিমা, হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নোয়াখালির বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহুনীতে নবমীর দিন আটটি মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর ছাড়াও সেখানকার ইস্কন মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গণধর্ষিতা তিনজনের মধ্যে ১০ বছরের এক শিশুর মুত্যৃ হয়েছে। কুমিল্লার নানুয়ার দীঘি মন্দিরে কুরআন রাখার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মূল আসামী ইকবাল হোসেনকে পাগল বলে প্রচার করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা আন্তজার্তিক অঙ্গনে ধিক্কৃত হয়েছে।

কালীগঞ্জের ফতেপুর ও চাকদাহে ২০১২ সালে সহিংসতার ঘটনার নেপথ্য নায়ক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলামসহ ২০১৩ পরবর্তী কক্সবাজারের রামু, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, যশোরের কেশবপুর, শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জের ফুলতলা, খুলনার রুপসা থানার শিয়ালী, সাতক্ষীরা সদরের বাবুলিয়া, দেবহাটার টিকেট, আশাশুনির প্রতাপনগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, প্রতিভাা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর এত বড় সহিংসতা ঘটতো না।

বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের সরকারি পাঠ্যপুস্তক থেকে হিন্দু ও অসাম্প্রদায়িক কবি-লেখকদের কবিতা ও গল্প বাদ দিয়ে জামায়াত ইসলাম ও হেফাজত ইসলামকে খুশী রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণার আদেশ দিলেও গত সাত বছরে সরকার তা কার্যকর করেনি। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সংবিধান থেকে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম কথাটি তুলে দেওয়ার জন্য নির্বাচনী ইস্তেহারে ঘোষণা দিলেও গত ১২ বছরেও তা কার্যকর হয়নি।

প্রতিটি উপজেলায় মডেল মসজিদ তৈরির ঘোষণা ও ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দিয়ে মানববতার মা হওয়ার ঘটনায় বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বে সমাদৃত। কিন্তু দলের ভিতরে আপদমস্তক হেফাজতীকরণ করে মুখে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে এদেশের হিন্দুদের রক্ষা করা যাবে না।

গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে নোয়াখালির জগন্নাথ মন্দিরে আবারো হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের উপর ঘটে যাওয়া একের পর এক সহিংস ঘটনায় প্রশাসন ও সরকারের উপর আস্তা হারাচ্ছে মানুষ। অবিলম্বে সংখ্যালঘু ট্রাইব্যুনাল গঠণ করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০২১)