শামীম হাসান মিলন, চাটমোহর (পাবনা) : পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিলের অধ্যুষিত উপজেলাগুলোর বিল ও নদীতে শুরু হয়েছে গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার বাউত উৎসব। হাজারো সৌখিন মৎস্য শিকারী মেতে উঠেছে মাছ ধরার এই বাউত উৎসবে। 

শনিবার চাটমোহর উপজেলা পাশর্^ডাঙ্গা ইউনিয়নের রামের বিলে এই উৎসবে শ’শ’ মৎস্য শিকারী মিলিত হয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার বিভিন্ন বিলে মাছ ধরার বাউত নামে।

উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা, বনগ্রাম, বেজপাড়া, প্রভাকরপাড়া, বড় গুয়াখড়া, ছোট গুয়াখড়া, হিয়ালদহ গ্রাম বিলটির চারপাশে। পাশ দিয়ে গেছে রেললাইন। এই গ্রামগুলো ছাড়াও আশপাশের গ্রাম থেকে কাকডাকা ভোর থেকে সাংসারিক সকল কাজ কর্ম ফেলে পলো, বাদাইজাল , ঘেরজাল ঠেলাজালসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে মাছ শিকার করতে আসেন। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় বাউত উৎসব।

পলো দিয়ে মাছ শিকারে আসা আমজাদ হোসেন জানান, পলো দিয়ে মাছ ধারা তার দীর্ঘদিনের শখ। তাই শত ব্যস্তরার মাঝেও প্রতি বছর বিলে বাউত উৎসবে আসি। তবে আগেকার তুলনায় দেশীয় প্রজাতির মাছ কমে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মাছ পাই আর না পাই এটি অন্যতম শখ।

তারা আরো জানান, হাত পলো, পাও পলো, নেট পলো ছাড়াও খেওয়া জাল, ঠেলা জাল, কারেন্ট জাল, ডোরা জাল, হাত খড়াসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে মাছ ধরতে নামের সৌখিন মৎস্য শিকারীদের। কৃষক, জেলে, ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় বিলগুলো। মাছ পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয় এ উৎসবে অংশ গ্রহণের আনন্দ বলে জানান সৌখিন মৎস্য শিকারীরা।

শুধু রামের বিলেই নয়, চলনবিলের সোনাকাদর, লাউবিলা, মাঠবিল, বাওনজানি, সেওলার বিল, খিলবিল, লারোনগাড়ি, হাতিগাড়া, ডিকশির বিল, রুতনীডাঙ্গা বিল, ডেঙ্গার বিল, খলিশাগাড়ি বিল, বড়াল, গুমানী, চিকনাই, রত্মাই ও করতোয়া নদীসহ বিলগুলোতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ ধরার বাউত উৎসব শুরু হয় পানি নেমে যাবার সময়। দু’একটা বিলে শুরু হয়েছে বাউত উৎসব।

উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, বাউত উৎসব গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। দেশের অন্যান্য এলাকায় এ উৎসব বিলুপ্তির পথে। তবে এ এলাকায় ঐতিহ্যটি এখনও টিকে আছে। বড় বিল, ডেঙ্গার বিল, খলিশাগাড়ি বিল, রউল বিল, ডিকশীবিলসহ অন্যান্য বিলে বাউতরা মাছ ধরছে। তবে বাউত উৎসবের ফলে জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে। দেশি প্রজাতির ছোট মাছ, শেওলা জাতীয় প্রাকৃতিক মৎস্য খাদ্য, পানির উপকারী অণুজীব এতে নষ্ট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সতর্কতা দরকার।

(এস/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০২১)