বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনের দুবলার চরে আজ (২৬ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে শুটকি মৌসুম। ৫ মাস ধরে চলা এই শুটকি আহরণ মৌসুম চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এই মৌসুমকে ঘিরে বঙ্গোপসাগর পাড়ে লোকালয় থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের দুবলার চরে যেতে শুরু করেছেন উপকূলের জেলে-মহাজনেরা। সুন্দরবন বিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রায় ১০ হাজার জেলে-মহাজন মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রথম দিনে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা থেকে দুবলারচরে অস্থায়ী শুটকী পল্লীর উদ্দেশ্যে সমুদ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছেন।

জেলেরা নৌপথে তাদের থাকার অস্থায়ী ঘর, মাছ শুকানো মাচা ও মাছ সংরক্ষণের গোলা তৈরিসহ খাদ্য সামগ্রী সাথে নিয়ে গেছেন। মঙ্গলবার ভোরে জেলেরা সুন্দরবনের দুবলার চরে পৌছে বঙ্গোপসাগরে নেমে পড়েছে শুটকির জন্য মাছ আহরণে। এবার শুটকি মৌসুমে দুবলার চরে জেলেদের জন্য ৯৮৫টি ঘর ও ৬৬টি ডিপোর অনুমোদন দিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।

প্রতি বছর টকী আহরণ মৌসুমে বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারিকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিক খালী, কবরখালী, চাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালীর চরে অস্থায়ী পল্লী তৈরী করে প্রায় ২০ হাজার জেলে-মহাজন শুটকী আহরনণ করে থাকে। ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এবার কিছুটা আগে হচ্ছে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজ শুরু। আগামী ৫ মাস মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশালসহ সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য সাগরপাড়ে অস্থায়ী বসতি গড়বেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলে ও মৎস্যজীবীরাও যাবেন দুবলারচরে।

সুন্দরবন বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, গত মৌসুমে শুটকি আহরিত হয়েছিল ৪৫ হাজার মেট্রিক টন সামুদ্রিক সাদা মাছ ও চিংড়ি মাছ ও বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়া। একই সাথে সুন্দরবনের নদ-নদী থেকে আহরিত হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ২শত মেট্রিক টন রূপালী ইলিশ। সুন্দরবনের শুঁটকী পল্লীর জেলেরা কমবেশী ৩০ প্রকার জাল ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে রোদে শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানীর জন্য উপযোগী করে প্যাকেটজাত করা হয়। এবার শুঁটকী মাছ থেকে চলতি মৌসুমে লক্ষমাত্র ৬ কেটি ২২ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করবেন বলে আশা করছে সুন্দরবন বিভাগ। আজ ২৬ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে সুন্দরবনের শুঁটকী পল্লীতে সামুদ্রিক মাছসহ চিংড়ী ও কাঁকড়া আহরণ।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও ভিনদেশি জেলেদের উৎপাতের শঙ্কা মাথায় নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা মাছ ও শুঁটকি আহরণের জন্য প্রথম দিনে প্রায় ১০ হাজার জেলে-মহাজন দুবলার চরের জেলে পল্লীতে। গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। বাংলাদেশি জেলেরা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা চুরি করে ধরেছে। তারা ভারতীয় সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে ট্রলার দিয়ে ইলিশ ধরে নিয়ে গেছে। চলতি মুটকী মৌসুমে জেলেরা যাতে সাগরে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার ও শুঁটকি তৈরি করতে পারেন সে জন্য প্রশাসনকে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন সদর দফতরের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার শেখ মেজবাহ উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, সুন্দরবন এবং সাগর এলাকায় সবসময় দস্যুদমন বনসম্পদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মোংলা কোস্টগাডের্র অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাগরে জেলেরা যাতে নির্বিঘেœ গন্তব্যে পৌঁছাতে ও সাগরে চলতি শুটকী মৌসুমে মাছ আহরণ করতে পারে সেজন্য কোস্টগার্ডের টহল অব্যাহত থাকবে। শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের জন্য জেলেদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এবারের শুটকি মৌসুমে দুবলার চরে জেলেদের জন্য ৯৮৫টি ঘর ও ৬৬টি ডিপোর তৈরীর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মৌসুম জুড়ে দুবলার চরে প্রায় ২০ হাজার জেলের সমাগম থাকবে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে সুন্দরবনের শুটকি মৌসুম। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে জেলেদের দুবলায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

(এসএকে/এসপি/অক্টোবর ২৬, ২০২১)