স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী রাজাকার তারা মিয়া ২০০৩ সাল থেকে অদ্যাবধি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকাভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারি ভাতা, ফ্ল্যাট ও অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করে আসায় অতিবিস্ময় প্রকাশ করে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ বলেছেন, তারা মিয়া রাজাকার শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কলঙ্কিত করেনি, সে মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর পদাঘাত করেছে। 

তিনি বলেন, রাজাকার তারা মিয়া নিজে নিজে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টেল তালিকাভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হয়নি। তার মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পশ্চাতে তার ইউনিয়ন উপজেলা ও জেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারদের প্রত্যয়ণপত্র লেগেছে। অথবা তার এলাকা এমপি বা কোনো মন্ত্রী বা কোনো নেতা/আমলার সুপারিশ লেগেছে। অতঃপর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অনুমোদনক্রমে তাকে মুক্তিযোদ্ধা/যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

আজ বুধবার এক বিবৃতিতে আবীর আহাদ উপরোক্ত মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের উদ্দেশ্যে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি দিয়ে রাজাকার তারা মিয়ার তথ্যাদি যাচাই করে প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার তারা মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা বনে যাওয়ার রহস্য উদঘাটন হলেই এ-সূত্রে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অবস্থানরত অন্যান্য রাজাকারদের পাকড়াও করা সহজ হবে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের গেজেটসহ পরবর্তীতে লাল মুক্তিবার্তা থেকে শুরু করে জামুকার নেতৃত্বে অদ্যাবধি বেসামরিক গেজেটে অর্থের বিনিময়, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক রাজাকার আলবদর ও অমুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পেয়েছে বলে বিপুল অভিযোগ রয়েছে। যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বসাকুল্য সংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজারের মধ্যে, সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৩৫ হাজারের ঊর্ধে। অর্থাত্ বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় ৮০/৮৫ হাজার অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের অবস্থান রয়েছে। এটা কোনো সুষ্ঠু, সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে না পারলেও আমাদের মাননীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, জামুকার সদস্যবর্গ ও সরকারের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না!

আবীর আহাদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাজাকার তারা মিয়ার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে। সে বিচারে হয়তো তার কঠিন শান্তি হবে। কিন্তু রাজাকার তারা মিয়া চরম জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা, বেসামরিক গেজেট ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তালিকায় কীভাবে কেমন করে কাদের যোগসাজশে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজলো, এসব বিষয়ের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে বলে মনে হয় না। সেখানে তার বিচার হবে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ এসব বিষয়ের। কিন্তু আমরা চাই, কী কী প্রক্রিয়ায় রাজাকার তারা মিয়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর কলঙ্কের কালিমা লেপন করার পাশাপাশি সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী, ফ্ল্যাট ও অন্যান্য সুবিধাদি সেই ২০০৩ থেকে অদ্যাবধি ভোগ করে আসছে, এজন্য অন্য মামলার আসামি করে জরুরীভিত্তিতে তাকেসহ অন্যান্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের কারিগরদের কঠিন শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

(এ/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০২১)