নওগাঁ প্রতিনিধি : জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সঞ্চয় ব্যুরো নওগাঁ শাখার ১১১ জন গ্রাহককে। এসব গ্রাহক তাঁদের ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে প্রায় দুই বছর ধরে কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না। মূলধনের টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না তাঁরা। দিনের পর দিন সঞ্চয় অফিসে ধর্ণা দিয়েও কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না তাঁরা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুন মাসে বিভাগীয় অডিটে বেশ কিছু গ্রাহকের সঞ্চয়ের প্রায় ৫ কোটি টাকার হিসাবে গরমিল ধরা পড়ে। পরে বিভাগীয় তদন্তে বের হয়ে আসে, ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নওগাঁয় সঞ্চয় অফিসে ৬২ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র কেনার জমা ভাউচার জালিয়াতি করে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তৎকালীন জেলা সঞ্চয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন গত বছরের ১৫ জুন ওই কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তভার আসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপর।

মামলার তদন্তে দেখা যায়, অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেন ছাড়াও ওই কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এমনকি মামলার বাদী সাবেক সঞ্চয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মেলে এবং তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আরও গ্রেফতার হন রংপুর বিভাগীয় সঞ্চয় অফিসের সাবেক উপ-পরিচালক মহরম আলী, নওগাঁ সঞ্চয় অফিসের উচ্চমান সহকারী হাছান আলী ও অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেন।
ওই ৬২ জন গ্রাহক ছাড়াও সঞ্চয় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সঞ্চয়পত্র কিনে দুর্ভোগে পড়েছেন আরও ৪৯ জন গ্রাহক। সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে প্রকৃত ভাউচার দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনলেও সঞ্চয় অফিস থেকে বলা হচ্ছে ওই সব গ্রাহকের নামের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো টাকা জমা হয়নি।

এ পরিস্থিতি গত বছরের ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় ভুয়া ভাউচার চিহ্নিত হওয়া ৬২ জন গ্রাহক ও প্রকৃত ভাউচারে টাকা জমা দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা না হওয়ায় ৪৯ জন গ্রাহকের ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের মূলধন ও মুনাফার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনার কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না ওই ১১১ জন গ্রাহক।

এ ব্যাপারে নওগাঁ সঞ্চয় অফিসের বর্তমান সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ১১১ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের হিসাব আপাতত স্থগিত করা রয়েছে। টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই করার নেই।

এদিকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত দুই বছরেও শেষ করতে পারেনি দুদক। কবে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হবে, তাও জানাতে পারছেন না কেউ। তবে সংস্থাটির দাবি, একাধিকবার মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় এবং তদন্ত নিখুঁতভাবে করতে সময় লেগে যাচ্ছে। দুদক আইনে প্রতিটি মামলার তদন্ত সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে তদন্তে ব্যাপকতা ও জটিলতা বিবেচনায় বাড়তি সময় দেয়ার রীতিও রয়েছে।

আদালতে এই মামলার দুদকের আইনজীবী মোজাহার হোসেন মোল্লা বলেন, এই মামলাটি বেশ জটিল। এই ঘটনার মূল হোতা ও টাকার প্রবাহ চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। এ ছাড়া দুদক এই মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর দুই বছরের মধ্যে দুইজন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। এসব কারণে মামলাটির তদন্ত শেষ হতে সময় লাগছে। বর্তমানে মামলাটি নওগাঁর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

এ সম্পর্কে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক রাজশাহীর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রবীন্দ্রনাথ চাকী বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এই মামলার তদন্তভার পেয়েছি। মামলার নথিপত্র বুঝে পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি গ্রহণ করব। তেমন কোনো জটিলতা না পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার চার্জশীট দেয়া হবে।’

(বিএস/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০২১)