অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে অনেকের সন্দেহ ও নানাবিধ প্রশ্ন থাকলেও দেশের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের একটি বড় অংশ এখন এই চিকিৎসার উপর পুরোপুরি আস্থা এনেছেন। সঠিক ভাবে ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করলে জটিল ও কঠিন রোগ হোমিওপ্যাথি ওষুধে যে ভালো হয় তার নজীর স্থাপন করেছেন হোমিও চিকিৎসক নজরুল ইসলাম।

নব্বই দশকে তিনি ইউরোপে গিয়ে নিজের বিপন্ন জীবনকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে হোমিও চিকিৎসার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। তার হোমিও চিকিৎসক হয়ে ওঠার গল্প যেমন চমকপ্রদ, তেমনি কষ্টেরও। এখন তিনি হোমিওপ্যাথি নিয়ে গবেষনা করেন। জটিল ও কঠিন কেস হিষ্ট্রি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এই চিকিৎসা শাস্ত্রকে নিয়ে গেছেন সাফল্যের চূড়ায়। বোন ক্যান্সার, ব্রেষ্ট টিউমার, পোষ্টেড ক্যান্সার ও বৃদ্ধি, বেষ্ট্র ক্যান্সার, টিবি, পিত্তথলিতে পাথর, ক্লোন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সারসহ নানা ধরণের জটিল ও কঠিন রোগীদের আস্থার প্রতিক হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রশাসনের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তাসহ সমাজের হতদরিদ্র নিম্ন আয়ের মানুষ এখন তার রোগী।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার উপর পেয়েছেন দেশী-বিদেশী পুরস্কার ও ডিগ্রী। স্বনামধন্য অনেক প্রতিষ্ঠান তাকে সম্মাননা ও ক্রেষ্ট দিয়ে ভুষিত করেছেন। বহু জার্নালে স্থান পেয়েছে তার চিকিৎসা পদ্ধতি। ভারতের নামি দামী হোমিও চিকিৎসকরা এখন তাকে এই চিকিৎসার ‘আইকন’ মনে করেন। নজরুল ইসলাম ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন ১৯৭৫ সালে। তার পিতার নাম গোলাম রব্বানী। ১৯৯৮ সালে তিনি ইটালী পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে তিনি জটিল রোগে আক্রান্ত হন। নিজের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি আস্থা খুঁজে পান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়। ইটালী, জার্মান, ভারত ও বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে নিয়েছেন প্রশিক্ষন।

বর্তমান তিনি কুষ্টিয়ার পিসি লাহেরী লেন, গোশালা রোডে স্থায়ী ভাবে বসবাস ও রোগী দেখছেন। প্রতি সোমবার হরিণাকুন্ডু শহরের হল বাজার এলাকার আয়েশা মার্কেটে “সাদিয়া হেলথ কেয়ার” চেম্বারে রোগী দেখছেন। ২০১৬ সাল থেকে নজরুল ইসলাম পুরোপুরি ভাবে হোমিও চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

হরিণাকুন্ডুর সাদিয়া হেলথ কেয়ারে কথা হয় হরিণাকুন্ডুর কালাপাড়িয়া গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ সুরুজ মালিথার সঙ্গে। তিনি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। তার ভাষ্যমতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নজরুল ইসলামের কাছে চিকিৎসা নেন। এখন তিনি অনকটাই সুস্থ বলে জানান সুরুজ মালিথার পুত্রবধু স্বপ্না খাতুন।

হরিণাকুন্ডুর শ্রীপুর গ্রামের বিশ্ববিদল্রালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ভুগছিলেন কিডনির পাথরে। ৩ ডোজ ওষুধ সেবনের পর তিনি এখন সুস্থ বলে নিজেই জানান। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শিলা খাতুন টিবি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসকরা তার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। নজরুল ইসলামের চিকিৎসায় তিনি আরোগ্য লাভ করেছেন। ব্রেষ্ট ক্যান্সারে কুষ্টিয়ার লক্ষিপুরের সাবিনা ইয়াসমিন ও লতা খাতুনের জীবন হয়ে ওঠে বিষাদময়। পুঁজ ও দগদগে ঘাঁ গোটা স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি করে। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত তারা হোমিও চিকিৎসক নজরুলামের দারস্থ হন। তার দেওয়া ওষুধ সেবন করে এখন দুজনাই সুস্থ।

দৌলতপুরের জুলেখা খাতুন, পশ্চিম আবদালপুরের সহিদা খাতুন ও হরিণাকুন্ডুর হরিয়ারঘাট গ্রামের লিপি খাতুন ব্রেষ্ট, বোন ও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে লিপি খাতুন ২০ বছর ধরে ভুগছিলেন টিবি রোগে। তার একটি লাঙ্ক কেটে ফেলা হয়। ৪৬ দিন বক্ষব্যাধী হাসপাতালে ছিলেন অচেতন। আর্থিক অনটন ও জীবন সায়াহ্নে নজরুল ইসলামের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করে লিপি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানান।

হরিণাকুন্ডুর রামনগর গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও কুষ্টিয়ার কলেজ ছাত্রী ফারজানা ভুগছিলেন সরিয়াসিস রোগে। এই রোগ নিরাময় খুবই কঠিন। চিকিৎসা ভাষায় এটিকে বলা হয় দুরারোগ্য চর্ম রোগ। হোমিও চিকিৎসায় তারা এখন সম্পুর্ন সুস্থ।

কুষ্টিয়া থানা পাড়ার খোকন সরকার গ্যংরিনে আক্রান্ত হয়ে তার দুই পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। পায়ে তার দগদগে ঘা ও পোকায় বাসা বেধেছে। পঁচা দুর্গন্ধে স্বজনরা কেউ কাছে যেতেন না। মৃত্যুর কথা ভেবে বার বার মুর্ছা যেতেন খোকন সরকার। শেষবারের মতো তিনি হোমিও চিকিৎসা নিতে যান নজরুল ইসলামের কাছে। তার চিকিৎসার তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। দুই পা আর কাটতে হয়নি খোকন সরকারের। এ ভাবে শত শত জটিল ও কঠিন রোগীর চিকিৎসা দিয়ে নজরুল ইসলাম আলোচনায় উঠে এসেছেন। তার চিকিৎসা দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছে ভারত বর্ষেও।

নিজের চিকিৎসা পদ্ধতি ও সাফল্য নিয়ে হোমিও চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, একজন রোগীর সবচে বড় প্রয়োজন ভরসা ও সাহস যোগানো। তারপর সঠিক ভাবে রোগ নির্নয়ের পর ওষুধ নির্বাচন করা। তিনি বলেন, ডায়াগনোসিস হচ্ছে রোগীর পুর্ব পুরষদের কেস হিষ্ট্রি পর্যালোচনা করা। সফল ভাবে এই কাজটি করতে পারলে জটিল ও কঠিন রোগী হোমিও চিকিৎসায় ভালো হতে বাধ্য। আর তিনি এই কাজটিই সব সময় করে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, হোমিও চিকিৎসা পদ্ধতি এখন আর অসহায় হতদরিদ্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সমাজের উচু স্তরের মানুষও এই চিকিৎসার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনছেন। অচিরেই হোমিও চিকিৎসা সব মানুষের মনে আস্থা করে নিতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।

(একে/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০২১)