স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি-বেসরকারি প্রয়াসে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এসময় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও অন্যান্য শিল্পোদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘এই সফরে আমরা নতুন টেকনোলজি সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। এই সফরটা আমাদের জন্য আই ওপেনিং (চোখে খুলে দেওয়া) ছিল। আমাদের একটা জিনিস ভালো লেগেছে, বাংলাদেশের কৃষি এমন একটা কৃষি ছিল, যেখানে আমরা ভেবেছিলাম কৃষকের ওপরে সব প্রোডাক্ট উন্নয়নের দায়িত্ব। আমরা যারা শহরের মানুষ আছি, কৃষকের কাছ থেকে পণ্য গ্রহণ করবো, বিপণন করবো এবং বিক্রি করবো।’

‘যেটা আমার ভালো লেগেছে- এবারের সফরে আমাদের দেশের সরকারকে সঙ্গে পেয়েছি, পাশে পেয়েছি। আমাদের প্রাইভেট সেক্টরকে সব পক্ষ তাদের পাশে পেয়েছে।’

আহসান খান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের দুজনের (সরকারি-বেসরকারি খাত) প্রয়াসে বাংলাদেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবো। কীভাবে? আমরা কৃষিতে ব্যাপকভাবে প্রোডাক্টিভিটি উন্নয়নের পেছনে কাজ করবো।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের আলুতে, টমেটোতে কাজ হবে। মরিচের কাজ হবে, পেঁয়াজ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, পেঁয়াজে কাজ হবে। এখন গ্রিন হাউজ লাগলে গ্রিন হাউজের কাজ হবে। যদি গ্রিন হাউজ না লাগে তবে বাংলাদেশে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে কৃষককে আরও প্রোডাক্টিভ করা যায়, সেই বিষয়ে কাজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা শুধু উৎপাদনে না, ডিস্ট্রিবিউশন, স্টোরেজ, বিপণনে ও প্যাকেজিংয়ে কাজ হবে।’

‘বাংলাদেশের নতুন অ্যাক্রিডিটেশন ল্যাব হবে। আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে দেখেছিলাম, সরকারপক্ষ আমাদের জন্য একটি অ্যাক্রেডিটেশন ল্যাব করতে ভীষণভাবে কাজ করছেন। এই ল্যাব করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যে প্রযুক্তি আনার দরকার সেটা নিয়ে কাজ করছেন। এতে ল্যাব কিন্তু অনেক এগিয়ে যাবে।’

সরকারের একার পক্ষে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই শিল্পোদ্যোক্তা বলেন, ‘প্রাইভেট সেক্টরের একার পক্ষে অসম্ভব নয়। কিন্তু দুজনের সমন্বয় যদি আমরা কাজ করি, তাহলে যে কোনো অসাধ্য সাধিত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস আমাদের চেয়েও ছোট। কিন্তু তাদের উৎপাদন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের উৎপাদনটা পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে বলে। আমরাও শুরু করবো। আশা করি আমাদের কৃষিতে আগামীতে বিপ্লব ঘটবে। এই সফরটাকে আমি আই ওপেনিং সফর হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই।’

এসিআই অ্যাগ্রো লিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এফ এইচ আনসারী বলেন, ‘গ্রিন হাউজে আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে নিয়ে প্র্যাকটিক্যালি গিয়েছিলাম এবং দেখেছি। আলোচনাতে আসলো গ্রিন হাউজে এক স্কয়ার মিটার জায়গাতে ১০০ কেজি টমেটো করতে পারে। এখানে দূষণের কোনো সম্ভাবনাও নেই। আমরা একটি কোম্পানির সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা বলেছি, এবং এগ্রিমেন্ট সই করবো। তারা রাজি হয়েছে এদেশে লোকালি যেসব ম্যাটেরিয়াল ফ্যাব্রিকেট করার সম্ভব আমাদের কারখানাতে ফ্যাব্রিকেট হবে। যেসব ম্যাটেরিয়াল সেনসেটিভ সেগুলো তারা পাঠাবে এবং টেকনোলজিও পাঠাবে। যাতে গ্রিন হাউজ অপারেশন করতে সমস্যা না হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা যেহেতু সেনসেটিভ টেকনোলজি তাই এক্ষেত্রে ট্রেনিংয়ের দরকার। আমরা আমাদের দেশ থেকে ৩-৪ জন কৃষিবিদকে সেদেশে পাঠাব, ৬ মাস তারা থাকবে। কমপ্লিট একটা ক্রপ করবে এবং পরবর্তী ক্রপকে তারা প্রুভ করে আসবে, যাতে তারা সেগুলো উৎপাদন করতে পারে। টমেটো, ক্যাপসিকাম অন্যান্য যেসব ভ্যালুঅ্যাডেড ক্রপ আছে, সেগুলো তারা করবে। এ বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়েছে।’

এফ এইচ আনসারী বলেন, ‘আমরা নেদারল্যান্ডে দেখেছি, আলু সেখানে ৮-৯ মাস সংরক্ষণ করা যায়। রং-ও ঠিক থাকে। এই প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করতে পারবো, এটা ব্যয় বহুল নয়।’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই সফরটা কৃষি খাতের জন্য ইউনিক একটা স্টেপ। যেখানে পলিসি মেকার সরকার, প্রাইভেট সেক্টর, রিসার্চার সবাই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আমাদের কৃষিটাকে নেক্সট লেবেলে নেওয়ার জন্য ডাচ কাউন্টার পার্ট থেকে পজিটিভ সিগন্যাল পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, আমাদের নেক্সট লেভেল রিকয়্যারমেন্ট কী, আমাদের নেক্সট লেভেল রিকয়্যারমেন্ট হচ্ছে প্রোডাক্টিভিটি ইফিসিয়েন্সি (উৎপাদনশীলতায় দক্ষতা) নিয়ে আসা। প্রোডাক্টিভিটি ইফিসিয়েন্সি যখন আসবে তখনই আজকের এক বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি, এটা ৫-১০ বিলিয়ন ডলার হবে।’

গ্রীষ্মপ্রধান ফলের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সুবিধাগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা হাতে-কলমে দেখে এসেছি। একটা প্রসেস করে, একটু ক্যাপাসিসি বাড়িয়ে এটা আমরা করতে পারি। তারা আমাদের আমের কথা বলছিল। তারা জানে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো আম হয় বাংলাদেশে। আমরা কমিট করেছি, আগামী মৌসুম থেকে যেন আমরা আরও বেশি ট্রপিক্যাল ফ্রুটস রপ্তানি করতে পারি।’

এসময় জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ এবং বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৪, ২০২১)