রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পথের জন্য জায়গা দিতে না চাওয়ায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের উত্তর দেবনগর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিরঞ্জন দাশের জমির প্রাচীর ভেঙে নয়টি নারিকেল, মেহগণি ও আমগাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তার কাঠ রাখার ঘর। 

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, নাশকতা মামলার আসামীরা উপস্থিত থেকে সন্ত্রাসী স্টাইলে এ গাছ কাটা হয়। বাধা দেওয়ায় নিরঞ্জন দাশের স্ত্রী শিবানী দাশকে লাঞ্ছিত করা হয়।

উত্তর দেবনগর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিরঞ্জন দাশ জানান, ১৯৯২ সালে নিজের পৈতৃক জমিতে বসতবাড়ি সংলগ্ন ২১ শতক জমি কেনেন জিয়াদ আলীর কাছ থেকে। আগে তিনি প্রতিবেশি সরোজিৎ দাশের বাড়ির পাশ দিয়ে ও দুর্গা মন্দিরের পিছন দিয়ে মেইন রাস্তায় উঠতেন। কয়েক বছর আগে প্রতিবেশি শিক্ষা কর্মকর্তা পরিতোশ দাশের সহায়তায় রণজিৎ, সুব্রত ও কাজল মন্দিরের পিছনে প্রাচীর দিয়ে তার যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। সম্প্রতি রণজিৎ, সুব্রত ও কাজল তার জমির উপর দিয়ে ট্রলি ঢোকানোর জন্য বিনা মূল্যে ছয় ফুট করে চওড়া ও ১৫০ ফুট লম্বা রাস্তা দাবি করে আসছিল। তিনি ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলামের ডাকা শালিসে জমি দিতে রাজী হননি। বর্তমানে তার বড় ছেলে রামপ্রসাদ আমেরিকাতে থাকে। ছোট ছেলে দেবপ্রসাদ দাশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। তারা বৃদ্ধ দম্পতি বাড়িতে থাকার সূযোগে শুক্রবার রাত আটটার দিকে প্রতিবেশি রণজিৎ দাশ, তার স্ত্রী আন্না রানী দাশ, তাদের ছেলে কাজল দাশ, সরোজিৎ দাশের ছেলে সুব্রত দাশ ও পাগল দাশের ছেলে সুদেব দাশ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে দা, কুড়াল নিয়ে তার জমিতে লাগানো চারিট নারিকেল গাছ, দু’টি আমগাছ ও তিনটি মেহগণি গাছ কেটে সাবাড় করে দেয়। আরো কয়েকটি গাছের গোড়া অর্ধেক কেটে রেখে চলে যায়। চলে যাওয়ার আগে তারা ইটের প্রাচীর ও কাঠ রাখার ঘর ভেঙে ফেলে। গাছ কাটতে বাধা দেওয়ায় তার স্ত্রী শিবানী রানী দাশকে লাঞ্ছিত করা হয়। গাছ কাটা ও প্রাচীর ভাঙচুরের সময় উপস্থিত ছিলো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব আলী, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনের উপর হামলাকারি কমপক্ষে হাফ ডজন নাশকতা মামলার আসামী মুকুল হোসেন ও শিশুতলার রবিউল ইসলাম। এ সময় তিনি বার বার ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন, ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলামকে মোবাইল করেও সাড়া পাননি। রাতে তিনি থানায় একটি অভিযোগ করলে দুপুরে পুলিশ আসে।

সরেজমিনে শনিবার সকালে উত্তর দেবনগর গ্রামে গেলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যতীনন্দ্র নাথ দাশ, ধর্মদাস দাশ, দেবাশীষ দাশ, রিঙ্কু দাশ, অনিতা দাশসহ কয়েকজন জানান, আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব, মুকুল, রবিউলসহ কয়েকজনের উপস্থিতিতে রণজিৎ দাশ, সুব্রত দাশ ও কাজল দাশসহ এলাকার ৫০/৬০ জন এ গাছপালা কাটাম প্রাচীর ও কাঠের ঘর ভাঙচুরে অংশ নেয়। শিবানী দাশ তাদেরকে বাধা দেওয়ায় লাঞ্ছিত হন। তবে জীবনের ভয়ে নিরঞ্জন দাশ ঘর থেকে বের হননি। তবে স্থানীয় একজন রাতের আঁধারে ওই গাছ কাটার ধারণকৃত চিত্র সাংবাদিকদের দেখান।

এ ব্যাপারে কাজল দাশ জানান, নিরঞ্জন দাশ শালিস মানেন না। মেম্বর চেয়ারম্যান মানেন না। তাই স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ওইসব গাছ গাছালি কেটে দিয়ে তাদের রাস্তা বের করার উদ্যোগ নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মোতালেব নিজেকে নিরঞ্জন দাশের জমিতে লাগানো গাছ কাটার সময় উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার না করেই বলেন, শালিসে রাস্তা নিয়ে কোন সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই রণজিৎ দাশ ও তাদের লোকজন গাছ গাছালি কেটেছে। এটা অপরাধ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয়ভাবে মীমাংসার সূযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলামের সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সদর থানার উপপরিদর্শক তন্ময় কুমার সাহা জানান, তিনি শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলণ পরিদর্শণ করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। বিষয়টি তিনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২১)