নিউজ ডেস্ক : শীত আসতেই বেড়ে যায় নিউমোনিয়া। অনেকেই মনে করেন, নিউমোনিয়া শুধু ছোটদেরই হয়! এই ধারণা ভুল। ছোট-বড় সবারই অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা এ সমস্যায় বেশি কষ্ট ভোগ করে।

ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে একজন করে শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী ৮ লাখ শিশু বা প্রতিদিন প্রায় ২২০০ শিশুর মৃত্যুবরণ করে এই রোগে।

এর মধ্যে প্রায় এক লাখ ৫৩ হাজারেরও বেশি নবজাতক আছে। বিশ্বব্যাপী প্রতি এক লাখ শিশুতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৪০০ টিরও বেশি।

নিউমোনিয়া কী?

নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের সংক্রমণজনিত একটি রোগ। এই রোগ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। তবে কখনো ফুসফুসে ছত্রাকের সংক্রমণের ফলেও নিউমোনিয়া হয়।

নিউমোনিয়া রোগের একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো ফুসফুসে ‘স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি’ নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। নিউমোনিয়া নিরাময় ও প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর লাখ লাখ শিশু এই রোগে আক্রন্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর নিউমোনিয়ায় মোট যত সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয় তার ১৫ শতাংশই শিশু, যাদের বয়স পাঁচ বছর বা তারও কম।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে বাড়তে থাকা দূষণ শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। যেহেতু শীতে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে যায় ও আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে, তাই নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাবও এ সময় বেড়ে যায়।

শিশুর নিউমোনিয়া হয়ে কি না বুঝবেন যেসব লক্ষণে-

জ্বর
অনর্গল খুসখুসে কাশি
শ্বাসকষ্টের সমস্যা
শ্বাসের সঙ্গে বুকে ব্যথা
মাথায় যন্ত্রণা
শরীর দুর্বল হয়ে পড়
খাওয়ায় অনীহা
সব সময় বমি বমি ভাব ইত্যাদি।

নিউমোনিয়া কেন হয়?

এই রোগ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। তবে ফুসফুসে ছত্রাকের সংক্রমণের ফলেও নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া রোগের একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো ফুসফুসে ‘স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি’ নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।

শীতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম সামান্য ঠান্ডা লাগলেও তারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।

সাধারণত, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যেই নিউমোনিয়ার প্রকোপ অধিক মাত্রায় দেখা যায়। তাই শীতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে বাঁচাতে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন।

যেভাবে শিশুর যত্ন নেবেন

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নিন। তাহলে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যাবে।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর কাছ থেকে আপনার সন্তানকে দূরে রাখুন। হাঁচি-কাশি হওয়া ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।

সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাতে হবে। বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে দিন। এ ছাড়াও খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে।

শীত যেহেতু নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে তাই শিশুকে ভিড়ের মধ্যে যেতে দেবেন না।

৬ মাসের কম এমন শিশুরা যদি বুকের দুধ পান করে, তাহলে সে নিউমোনিয়ার জীবাণু অনেকটাই প্রতিহত করতে পারবে।

৬ মোসের বেশি শিশুদেরকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার হিসেবে দেশীয় খাবার, যেমন- খিচুড়ি, দেশি ফলমূল, শাকসবজি খাওয়াতে হবে।

অপুষ্টির কারণেও শিশুর ঘন ঘন নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই শিশুর পুষ্টির দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

নিউমোনিয়ার হাত থেকে বাঁচাতে শিশুকে গোসল কারানোর সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। পানিতে জীবাণুনাশক মেশাতে ভুলবেন না।

শীতে শিশুর ডায়াপার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হবে। ভেজা ডায়াপার দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে অ্যালার্জির সমস্যাও হতে পারে।

ঠান্ডা লেগে শিশুর নাক বন্ধ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নেজাল ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।

তথ্যসূত্র : ইউনিসেফ/জি নিউজ

(ওএস/এএস/নভেম্বর ২৯, ২০২১)