নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্ভাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৩ টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও ১১টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮ টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। 

নৌকার প্রার্থীদের বাইরে যে ১১ জন স্বতন্ত্র হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৪ জন। বাকি ৭জনের মধ্যে ৪ জন বিএনপি ও ৩ জন জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। একটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোট পড়েছে ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এখানে আওয়ামীলীগের এহেন ভরাডুবির জন্য স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বের কোন্দলকেই দায়ী করেছেন সচেতনমহল। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, অনুপ্রবেশকারীদের প্রাধান্য দেয়া এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয়ভাবে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করায় দলের এমন ভরাডুবি হয়েছে বলে রাজনৈতিক সচেতনমহলে কথা উঠেছে।

আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে বেশ কিছু ইউনিয়নে একেবারে অপরিচিত ও অযোগ্য প্রার্থীদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া ও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অনেক নেতা-কর্মীর কাছেই তিনি পছন্দের ছিলেন না। তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে এ ইউনিয়নে গাজীবুর রহমানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ কারণে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীই তাঁর পক্ষে কাজ করেননি। মনোনয়ন চুড়ান্তÍ হওয়ার পরেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় অনুমেয় ছিল। ভোটের ফলাফল বেরনোর পর তার প্রমাণ মিলল।

মান্দা সদর, নুরুল্যাবাদ ও তেতুলিয়া ইউপিতে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জামায়াত নেতারা বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া মৈনম, কাঁশোপাড়া, বিষ্ণুপুর ও ভালাইন ইউপিতে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা এবং প্রসাদপুর, গনেশপুর, কুশুম্বা ও কালিকাপুর ইউপিতে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপি নেতারা বিজয়ী হন।

দলের প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় হলেও মান্দায় আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সমর্থন কমে গেছে এটা বলা যাবে না। এবারের ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী সিলেকশনে অনেক ভুল-ত্রুটি ছিল। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব দেখে হাইব্রিড জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন।’

জানতে চাইলে মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোট ভাগাভাগির কারণে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয় হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে। এসব ভুলত্রুটি চিহ্নিত ও সেগুলোর সমাধান করে আগামীতে দলকে সুসংগঠিত করতে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা হলেন, ভারশোঁ ইউনিয়নে মোস্তাফিজুর রহমান সুমন (আ.লীগ), ভালাইনে গোলাম মোস্তফা মন্ডল (আ.লীগ বিদ্রোহী), পরানপুরে মাহফুজুর রহমান (আ.লীগ), মান্দা সদর ইউনিয়নে তোফাজ্জল হোসেন (স্বতন্ত্র জামায়াত), গনেশপুরে শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী (স্বতন্ত্র বিএনপি), মৈনমে আনিছুর রহমান (আ.লীগ বিদ্রোহী), প্রসাদপুরে আব্দুল মতিন মন্ডল (স্বতন্ত্র বিএনপি), কুসুম্বাতে নওফেল আলী মন্ডল (স্বতন্ত্র বিএনপি), তেঁতুলিয়ায় এসএম মখলেছুর রহমান (স্বতন্ত্র জামায়াত), নুরুল্লাবাদে ইয়াছিন আলী প্রামানিক (স্বতন্ত্র জামায়াত), কালিকাপুরে আশরাফুল ইসলাম (স্বতন্ত্র বিএনপি), কাঁশোপাড়ায় আব্দুস সালাম (আ.লীগ বিদ্রোহী), কসবে ফজলুর রহমান (আ.লীগ), এবং বিষ্ণুপুরে এসএম গোলাম আজম (আ.লীগ বিদ্রোহী)।

অপরদিকে, বদলগাছী উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে নৌকা প্রতিকে পাঁচজন এবং স্বতন্ত্র তিনজন বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

বিজয়ীরা হলেন, নৌকা প্রতীকে বদলগাছী সদর ইউনিয়নে আনোয়ার হোসেন, কোলা ইউনিয়নে শাহীনুর ইসলাম স্বপন, পাহাড়পুর ইউনিয়নে মিজানুর রহমান কিশোর, মিঠাপুর ইউনিয়নে ফিরোজ হোসেন এবং মথুরাপুর ইউনিয়নে মাসুদ রানা। স্বতন্ত্র পদে বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন, বালুভরা ইউনিয়নে আল এমরান হোসেন, বিলাশবাড়ী ইউনিয়নে সাইদুর রহমান কেটু এবং আধাইপুর একেএম রেজাউল কবীর পল্টন।

এ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৩২ জন। যেখানে চেয়ারম্যান পদে ৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ৭৪টি কেন্দ্রের ৪৭৮ টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হয়। বদলগাছী সদর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহন করা হয়।

(বিএস/এসপি/নভেম্বর ২৯, ২০২১)