আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বর্তমান সময়ে যেসব শিশুরা জন্মগ্রহণ করছে, তারা তাদের পূর্ববতী প্রজন্মের তুলনায় সাত গুণ বেশি বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি এ থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া সম্ভব হয়, তবে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন বিপর্যয়ের ঘটনাগুলো খুবই স্বাভাবিক। চলতি বছর চীনে বন্যার কারণে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মের পুরোটা সময় জুড়েই গ্রিসে আগুনের উত্তাপ ছড়ায়। প্রচণ্ড দাবদাহে কানাডায় প্রায় ৭শ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৬শ মানুষ মারা গেছে।

এরই মধ্যে রাশিয়ায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে টেক্সাসে ভয়াবহ তুষারপাতের ঘটনা ঘটেছে। স্পেন থেকে সাইবেরিয়া, সর্বত্রই উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

একাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত নিউ সায়েন্সে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, তরুণরা ঠিক কতবার তাদের জীবদ্দশায় এরকম ঘটনাগুলোর সম্মুখীন হয়ে থাকে। বিবিধ জলবায়ু পরিস্থিতি ও জনসংখ্যাভিত্তিক মডেলগুলোর ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা ছয়টি চরম আবহাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো- দাবানল, অনাবাদ, খরা, নদীর পানি বেড়ে যাওয়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়।

দেখা গেছে, ১৯৬০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া প্রায় প্রতিটি প্রজন্মই বিভিন্ন শিল্প গড়ে ওঠার সময়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত চরম উষ্ণতার সম্মুখীন হয়েছে। এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ।

বর্তমান জলবায়ু আইন অনুযায়ী, ২০২০ সালে জন্মগ্রহণ করা শিশুরা ১৯৬০ সালের শিশুদের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে সাত গুণ বেশি চরম মাত্রায় জলবায়ুজনিত ঘটনাগুলোর শিকার হবে। যেমন- ১৯৬০ সালে যারা জন্মগ্রহণ করেছে, তারা জীবনে চারবার তাপমাত্রার বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, ২০২০ সালে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন ৩০ বার।

তবে যদি তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয় তবে ২২ বারের মতো এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে এবং উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সীমিত হলে এই অভিজ্ঞতা হবে ১৮ বার। এদিক থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পৃথিবীতে ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করা কারো চেয়ে ২০২০ সালে জন্মগ্রহণ করা একটি ছয় বছর বয়সী শিশু অনেকবার দাবানলের ঘটনার সম্মখীন হবে। এছাড়া অন্তত দুবার দাবানল ও ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, তিনবারের বেশি নদীর পানি বেড়ে যাওয়া, চার বারের বেশি অনাবাদ, পাঁচ বারের বেশি খরা ও ৩৬ বারের মতো তাপমাত্রার বৃদ্ধির অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে সে।

এখানে ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিষয়টিও লক্ষ্যনীয়। ধনী দেশগুলোর চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মতো দরিদ্র দেশগুলো অধিক হারে চরম আবহাওয়ার সম্মুখীন হবে। ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উষ্ণতা কমিয়ে আনলে এই ঝুঁকিকে ‘কিছুটা সীমিত’ করা যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন- এক্ষেত্রে তাপমাত্রার উষ্ণতা বৃদ্ধি শতকরা ৪০ ভাগে কমে আসবে। তবে আরো দ্রুত ও বাছবিচারহীনভাবে এর বৃদ্ধি ঘটলে তখন এই ক্ষতির ভয়াবহতা রোধ করা সম্ভব হবে না।

অনেক মানুষের কাছে এটা তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ১০ হাজার মানুষের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা একটি জরিপে দেখা গেছে, দশটি দেশের ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী শতকরা ৭৫ ভাগ তরুণ ভবিষ্যতের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৪৫ ভাগ তরুণ বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জীবনমানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। ফিলিপাইন ও ভারতের মতো দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বাপেক্ষা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ৩০, ২০২১)