কক্সবাজার প্রতিনিধি : বিশ্বব্যাপী নারী-মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ-নির্মূলে সচেতনতা বৃদ্ধি, অ্যাডভোকেসি জোরদার এবং প্রতিবন্ধকতা ও সমাধান সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ তৈরির অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও বিশেষ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে।

এ নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) রোহিঙ্গা ক্যাম্প বর্ধিত ৪-এ একটি আলোচনা সভা ও মেলার আয়োজন করা হয়।

চলমান এ মহামারিতে সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করতে এবারের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘কমলা রঙের বিশ্ব গড়ি: এখনই নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করি’।

জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেনের উদ্যোগে অ্যাকশন এইড, এফএও, ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন ও ডাব্লিউএফপি’র সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন দেশে নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি নানা ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়।

আলোচনা সভায় বক্তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে তাদের উদ্যোগ, প্রতিবন্ধকতা ও এ সমস্যা সমাধানে করণীয় সম্ভাবনাময় দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

এফএও কক্সবাজারের সাব অফিস প্রধান মার্কো দে গায়েতানো বলেন, আপনাদের খাবার ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। আজ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ে আমরা সমবেত হয়েছি। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিস্ট এবং রিজিওনাল কোর্ডিনেটর তানজিলা তাসনিম বলেন, মানবতার কল্যাণে আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য এখানে আছি। পরিবারে শুধু কন্যা সন্তান নয়, পুরুষ সন্তানরাও যেন নির্যাতনের শিকার না হয় সেদিকে অভিভাবকদের কাজ করতে হবে।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ৮ ও ১৪-এর প্রতিনিধি শোয়েব আহমেদ খান এবং শরীফুল ইসলাম বলেন, আমরা রোহিঙ্গা কমিউনিটির নিরাপত্তায় ও সব ধরনের সহিংসতা রোধে কাজ করছি। বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আমরা বদ্ধ পরিকর।

অনুষ্ঠানে অ্যাকশনএইড কক্সবাজারের হেড অব প্রটেকশন নুজুলি বেগম, ইউএনএইচসিআর-এর জিবিভি অফিসার টেরা ম্যাকিন্নন, ইউনিসেফের চাইল্ড প্রটেকশন স্পেসালিস্ট গের্টরুট মুবিরু, ডাব্লিউএফপি হেড অব প্রটেকশন রোলা আলকালিদ, ব্র্যাক ও ডাব্লিউএইও'র প্রতিনিধিরা স্বাগত বক্তব্য দেন।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাল্যবিয়ে ও বহুবিয়ে নারীর প্রতি সহিসংতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশু জন্মের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। সারাদেশে যেখানে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশু জন্মের হার ৩ দশমিক ৫। করোনার কারণে অনেক কার্যক্রম বন্ধ ছিল, বর্তমানে অনেকাংশে স্বাভাবিক কাজ শুরু হয়েছে।

সমাপনী বক্তব্যে ইউএন উইমেনের সাব-অফিস হেড ফ্লোরা ম্যাকুলা বলেন, বাংলাদেশ সরকার লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এ বিষয়ে কাজ করছে। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে এ বিষয়ে ক্যাম্প ইনচার্জ, এপিবিএনসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইউএন উইমেনের কমিউনিকেশন অফিসার মাহমুদুল করিম।

আলোচনা সভার পাশাপাশি সেখানে দিনভর মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় রোহিঙ্গা এবং হোস্ট কমিউনিটির নারীদের হাতের তৈরি নানা ধরনের পণ্য ও খাবার বিক্রি করা হয়। কমলা রঙের কাপড় পড়ে রোহিঙ্গা নারী ও উন্নয়নকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠে।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০১, ২০২১)