রণেশ মৈত্র


এসেই গেলো ডিসেম্বর মাস-বিজয়ের মাস। বাড়ীত ইতিহাস হোলো মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর শুরুর মাস। ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ থেকে বছরে শুরু এবং ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ এ বছরটির সমাপ্তি টানার কথা।

এ নিয়ে লিখতে বসেই খবর পেলাম ২৭ নভেম্বর ভোরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ-সৈনিক, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। কী ভয়াবহ দুঃসংবাদ। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর যে পালা ১৯৭১ এ শুরু, ৭৫ থেকে যার ব্যাপক ও ভয়াবহ বিস্তার, ২০২০ এ এসে তা যেন সহ্যের সকল সীমা অতিক্রম করে এক মারাত্মক শূণ্যতায় ঠেলে দিয়েছে-দিচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে।

আর এই সীমাহীন শূণ্যতায় সুবর্ণ জয়ন্তীর আনন্দের আবহটাকে বেদনায় ভারাক্রান্ত করে দিয়েছে। ঐ গৌরবোজ্জ্বল বছর জুড়ে আরও কত শূন্যতার মধ্যে পড়তে হবে দেশটাকে তা ভাবতে শিউরে উঠতে হয়।

এবার বিজয় দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতি যখন পালন করবে চোখ মেলে তা কালে দেখবে ড. আনিসুজ্জামান নেই, কামাল লোহানী নেই, রশিদ হায়দার নেই, আলী যাকের চলে গেলেন, আরও অনেকে বিদায় নিয়েছেন করোনায় বা অন্য কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র নয়টি মাসে। শূণ্য হয়ে এলো বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, যাঁরা কোন ক্রমে একাত্তরে বেঁচে গিয়েছিলেন দেশটাকে সুন্দর করে গড়েতে চেয়েছিলেন। প্রতিদিন কেউ না কেউ ঢলে পড়ছেন বা পড়তে বাধ্য হচ্ছেন মৃত্যুর শীতল কোলে জাতিকে অসহায়তার মধ্যে নিক্ষেপ করে। চলে গেলেন দেশ ও জাতির যখন মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার সামান্য আগে।

তাই এবারের ১৪ ডিসেম্বর যখন আসবে-যেদিন ১৬ ডিসেম্বরের ভোর হবে-আমরা যাব বটে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে। মিছিল? বড্ড অনিশ্চিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশের কারণে। একই কারণে সভা, সমাবেশ, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি সবই হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।

এমন এক দুর্য্যােগ একাত্তরের আগে বা পরে কোন দিনই প্রত্যক্ষ করতে হয় নি বাঙালি জাতিকে। এবার সমগ্র জাতির জীবন অনিশ্চিত শীতে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় উত্তাল তরঙ্গের আশংকায়। আজ তা আর সম্ভাব্য নেই দিনে দিনে আশংকাটি বাস্তব হয়ে উঠছে। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার বহু দেশ করোনার দ্বিতীয় আঘাতে আতংকিত। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম হবে কেন?

একাত্তরে বাঙালি জাতির বাঁচার সংগ্রাম। পেছনে ফেলে আসা জাতীয় অঙ্গীকার সমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সমগ্র জাতির সম্মিলিত প্রয়াসে মরণপণ সংগ্রাম।

তাই মাস্ক পরিধান, বারবার সাবান জলে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা-এই বিষয়গুলিকে সুবর্ণ জয়ন্তীতে নতুনভাবে পালনের এবং পালনের সুযোগ করে দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হোক। শহর, নগর, বন্দর, ইউনিয়ন গ্রাম,উপজেলা, জেলা-সকল পর্য্যায়ে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মে শতবার্ষিকীও চলছে-শুরু হতে চলেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী। তাই আজীবনের লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুর প্রতিশ্রুতিগুলিকে, তাঁর স্বপ্নগুলিকে, ভাষা শহীদ, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনারা যে মহান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রত্যয়ী হয়েছিলেন-সুবর্ণ জয়ন্তীতে তার যাত্রা পুনরায় শুরু হোক-শুরু হোক সেগুলি বাস্তবায়নের পথের বাধা-প্রতিকূলতাগুলিকে অপসারণের কাজও।

পথকেকাষ্টকাকীর্ণ রেখে, বিপদাশংকা সর্বদা মাথায় নিয়ে ঐ মহান প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্নগুলিতে বাস্তবায়ন অসম্ভব ৫০টি বছরের ইতিহাস আমাদেরকে সেই শিক্ষাই দেয়। সেই শিক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়েই এগুতে হবে।

আজ দেশবাসী যেমন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে, অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধের আদলে প্রাণিত জাতির যোগ্য সন্তানদের করোনার কারণে হারিয়ে শোকার্ত-ঠিক একই সময়ে তাদের জীবন অর্থনৈতিক দুরবস্থা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, লুঠ-পাট, চোরাকারবারি, বিদেশে অর্থসম্পদ পাচার, বেকারত্ব প্রভৃতি জর্জরিত। এই সংকট, মূলত: অর্থনৈতিক সংকট আমাদের জাতির জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে করে তুলেছে হতাশায় নিমজ্জিত।

আমরা যদি পৃথিবীর ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক এবং অপর জননন্দিত বিপ্লবী নেতার বক্তৃতা ভাষণ প্রতিশ্রুতিগুলিকে জাতির জীবনে বাস্তবিকভাবে প্রতিফলিত করতে চাই তবে পুঁজিবাদের পথ শোষণের পথ, বৈষম্য সৃষ্টির পথ সর্বাগ্রে বন্ধ করে বেষম্য, শোষণ ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার কাজে অবিলম্বে হাত দিতে হবে।

সে লক্ষ্যে বিজাতীয়করণকৃত শিল্পকারখানসাগুলিকে পুন: জাতীয়করণ, সেগুলিকে কর্মচ্যুত শ্রমিকদেরকে পুন:নিয়োগ ব্যাপক শিল্পায়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, আমলা নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের ব্যবস্থার ব্যাপক গণমুখী সংস্কার, আইনের আসন পূরোপূরোরি বহাল, সমগ্র অর্থনীতি ও জাতীয় জীবনকে পূরোপূরি দলীয়করণমুক্ত, দল নয় প্রতিভার প্রতি গুরুত্ব প্রদান, শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন মাসিক ১৮,০০০ টাকায় নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়ন, রফতানী ভিত্তিক শিল্প কারখানাগুলিকে নানা প্রণোদনা প্রদান, কৃষি জমি হস্তান্তর রোধ এবং কৃষির বৈজ্ঞানিক সম্প্রসারণ, নদ-নদী দখলমুক্ত ও তার গভীরতা সৃষ্টির মাধ্যমে মৎস্যে উৎপাদন বৃদ্ধি, নৌ চলাচল চালু, রেলপথ বাড়ানো এবং তার আধুনিকীকরণ, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি ও তা সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা নির্মাণ, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আয়ের সাথে দ্রব্যমূল্য, বিচ্যুত, গ্যাস, জল, শিক্ষা ও অন্যান্যের মূল্যের সঙ্গতি সাধন প্রভৃতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অঙ্গীকার ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ হোক মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীতে হোক আমাদের প্রত্যয়নিষ্ঠ সাধনা।

মুক্তিযুদ্ধের প্রধানতম চেতনা, সাম্প্রদায়িকতায় মূলোচ্ছেদ ও ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ যেখানে মানুষে মানুষে সম-মর্য্যাদা, সম-অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে সকল সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্মুল করা, বাহাত্তরের মূল সংবিধানে অবিলম্বে প্রত্যাবর্তন এবং সে লক্ষ্যে জানুয়ারী ২০২১ এ জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডেকে ব্যবস্থা গ্রহণ ও জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম সহ সকল ধর্মাশ্রয়ী দল ও সংগঠনকে বে-আইনী ঘোষণা করে সংবিধান সংশোধনই হবে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নীতিনিষ্ঠ ও বাস্তব পদক্ষেপ। জিয়ার পঞ্চম ও এরশাদের অষ্টম সংশোধনীকে জায়েজ করে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করায় জাতি দিনে দিনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ থেকে পিছিয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে আর বিলম্ব না করা, কালক্ষেপন বা টালবাহানা না করে দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা সর্বাধিক জরুরী।

বাঙালী জাতি বিজয়ী জাতি। ১৯৭১ এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পূর্ববর্তী ২৩ বছরের নিরস্ত আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে যে গৌরবজনক অর্জনগুলি জাতির জন্য যে দুর্লভ সম্মান এনে দিয়েছিল-আজ ধর্মের নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিরা সাংবিধানিক বৈধতার সুযোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য্য তৈরী করলে তা বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপের প্রকাশ্য হুমকি দেওয়ার পরেও রাষ্ট্রশক্তির নির্বিকার থাকা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং তার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন ছাড়া অন্য কিছু নয়। তেমনই রাষ্ট্রীয়ভাবে মহান জাতীয় সংসদে ‘সংবিধান দিবস’ ৪ নভেম্বরে একটি রেকর্ড বাজিয়ে সংসদ সদস্যদেরকে শুনানো হয়। ভাষণটি ঐতিহাসিক। ঐ ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন সংসদে বিপুল সমর্থনে বাহাত্তরের সংবিধান নামে খ্যাত সংবিধানটি অনুমোদিত হওয়ার পর ঐ সংবিধানের মৌলিক দিকগুলি উল্লেখ করে। বিস্ময়কর এই যে মাননীয় স্পীকারের এবং মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে শুনানো ঐ ভাষণটি থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দ দুটি মুছে দেওয়া হয়েছিল।

শব্দ দুটি বাহাত্তরের সংবিধানের চার মৌল রাষ্ট্রীয় নীতি ধর্মনিরপেক্ষতা। কে মুছে দিল সে প্রশ্নের জবাবে স্পীকার জানালেন, তিনি রেকর্ডটিপে যেভাবে পেয়েছেন-সেভাবেই ওটা বাজিয়ে শুনানো হয়েছে। আবার যেখান থেকে রেকর্ডটি আনা হয়েছিল-তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল তাঁরা কোন কিছুই মুছেন নি। তাই এ ব্যাপারে সংশয় ও ক্ষোভের অন্ত নেই। প্রশ্ন করি, ঐ রেকর্ড বাজানোর আগে তা বাজিয়ে শুনে সব কিছু ঠিক আছে কি না তা যাচাই করা হলো না কেন? ওই রেকর্ডে যদি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ না থেকে দেলোয়ার হোসেন সাঙ্গদীর ওয়াজ থাকতো-কেমন হতো তবে?

আর একটি প্রশ্ন-ঐ ভুল রেকর্ড বাজানোর জন্য মাননীয় স্পীকার সংসদের পক্ষ থেকে সংসদে বসেই দু:খ প্রকাশ করে তাৎক্ষণিকভাবে রেকর্ডটি বাতিল ঘোষণা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র শব্দ দুটি কোথা থেকে কে মুছে দিলো তা খুঁজে বের করার জন্য সংসদীয় বা বিচার বিভাগীয় দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র দ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিলেন না কেন? মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই এ ব্যাপারে নীরব কেন? বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অবিচ্ছিন্ন। তিনি জাতির জনক-তাঁর ভাষণ বিকৃত করা বা বিকৃত ভাষণ বাজিয়ে শুনানো অবশ্যই রাষ্ট্রীয় অপরাধ। এ দাবী জাতির এবং এ সমস্যার সমাধান গ্রহণযোগ্যভাবে না করা পর্য্যন্ত এ দাবী উত্থাপিত হতেই থাকবে।
কিন্তু যদি বঙ্গন্ধুর ভাষণের এমন একটি খdBgek ও বিকৃত রেকর্ড জাতীয় সংসদে বাজানো হলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ বেদনা বছর জুড়েই জাতিকে, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে এবং সকল দেশপ্রেমিক নাগরিককে বয়ে বেড়াতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিবর্ষ জুড়ে।

কিন্তু বেদনাই কি সব? নিশ্চয়ই ইতিহাস তা বলে না। বাঙালি সকল সংগ্রামেই সুর্দীঘ অতীত থেকে একের পর এক বিজয় অর্জন করে এসেছে ১৯৭১ এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত। তার পরেও বাঙালি ক্ষান্ত হন নি। স্বৈরাচার ও স্বৈরাচারীর শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আশির দশকে দশক ব্যাপী যে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তুলে বিজয় অর্জন করেছিলেন-তাও সারা পৃথিবীতে নজির বিহীন। সামরিক শাসন বহু দেশেই হয়েছে অতীতে কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তার অবসান ঘটানোর নজির খুঁজে পাওয়া কঠিন। আন্দোলনটা এতটাই সফল হয়েছিল যে সেই স্বৈরাচারী শাসক অপর একজনের কাছে শান্তিপূর্ণভঅবে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্যই শুধু হন নি তঁকে স্থান নিতে হয়েছে কারাগারে। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কারাদ-ও ভোগ করতে হয়েছে কয়েক বছর ধরে।

১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালি বিদেশী শাসন-শোষণ মুক্ত হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে নিজেরাই দেশটাকে গড়ে ত্যোলার সুযোগ পেয়েছে, নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করার সুযোগ পেয়েছে-দেশ-বিদেশে নিজস্ব জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত নানা অনুষ্ঠানে পরিবেশনের সুযোগ পেয়েছে, আন্তর্জাতিক নানা সম্মেলন, সমাবেশ, উৎসব, সেমিনার প্রভৃতিতে প্রতিনিধিদল সরকারী বেসরকারীভাবে পাঠিয়ে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছে।

শত্রুরা তৎপর-ব্যাপক সতর্কতা প্রয়োজন

শত্রুরা এসব চাইছে না। ধীরে ধীরে, এই পাঞ্চাশ বছরে, তারাও কিন্তু দিব্যি সংগঠিত হয়েছে এবং সরকারি দুর্বলতার কারণে, তারাও সরকারের উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতাও অর্জন করেছে। জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম বয়স্ক মানুষের নিশ্চয় মানবেন, পাকিস্তান আমলের চাইতে অনেক বেশী শক্তি অর্জন করেছে। সরকারকে সচেতন করে, সতর্ক করে বলতে চাই, যদি পাকিস্তান আমলের চাইতে আজ স্বাধীনতার ঐ চিহ্নিত শত্রুরা অনেক বেশী শক্তি অর্জন করে যাকে তবে নিশ্চয়ই তারা দেশের অনেক বেশী ক্ষতি ও সাধন করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। ওরা শুধু একাত্তর নয়-পঁচাত্তরের চাইতেও ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে তৎপর এটা অনুমান করতে বেশী কিছু লাগে না।তাই সরকার সতর্ক হোক, মুক্তিযোদ্ধারা, তরুণেরা, দেশপ্রেমিক সকল মানুষ ও সংগঠনের সতর্কতা গভীরভাবে আজ প্রয়োজন।

বাঙালি উৎসব করবেন পুলিশ প্রহরায় কেন? বাঙালি ঈদের জামায়াতে নমায পড়বেন-পুলিশ প্রহরায় কেন? বাঙালি দুর্গাপূজা করবে-পুলিশ প্রহরায় কেন? বাঙালি বড় দিনের প্রার্থনা করবে গীর্জায় গীর্জায়-তাতেই বা পুলিশ প্রহরায় কেন?

পহেলা বৈশাখ-বাঙালির প্রাণের উৎসব –বাঙালি সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ উৎসব। তার উপর হামলা কারা করে-কাজের জন্যে পুলিশ র‌্যাবের কয়েকধাপ পাহারা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হয় কেন?

যদি মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা উত্থাপিত প্রশ্নগুলির সমাধান খুঁজি-সমাধান করতে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসি ঐক্যবদ্ধভাবে-তবেই হবে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীর অর্থবহ উদযাপন।

লেখক : সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।