আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : প্রয়োজনীয় সচল গাড়ীর অভাবে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোটি কাঙ্খিত যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। বিআরটিসিতে সচলের চেয়ে অচল গাড়ীর সংখ্যাই বেশী। 

দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র সরকারী এ ডিপোতে সাতটি দ্বিতলসহ প্রায় ৭০টি বাসের মধ্যে বিভিন্ন রুটে নিয়মিত চলাচল করছে মাত্র ৩৮টি। এরমধ্যে ১৮টি বাস সম্পূর্ণ চলাচলে অযোগ্য বিধায় নিলামে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। সাতটি বাস চলছে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারায়। দুটি বাস মেরামত করে যেকোন জরুরী প্রয়োজনে সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি দ্বিতল বাস বর্তমানে অপেক্ষমান আছে।

তবে নানামুখী সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দক্ষিণাঞ্চলের সাগরপাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাসে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করা এ বাস ডিপোটি মুনফায় ফিরলেও দু’দফায় করোনা মহামারী সংকটে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ছাড়াও জ¦ালানী, স্পেয়ার্স এবং টায়ারের দাম বকেয়া পরে রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে ওঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ডিপোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

সূত্রে আরও জানা গেছে, বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপো থেকে বর্তমানে পদ্মা সেতুর পশ্চিম প্রান্তের কাঠালবাড়ীতে প্রতিদিন গড়ে ১৮টি বাসে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এর বাহিরে বরিশাল থেকে রংপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সাতক্ষীরা, মুন্সিগঞ্জ, খুলনা, গোপালগঞ্জ পাথরঘাটা, কুয়াকাটা, আমুয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন রুটে বাস সার্ভিস পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে বাস সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় এ ডিপো থেকে আরো বেশ কয়েকটি জনগুরুত্বপূর্ণ রুটে যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। এমনকি অতিসম্প্রতি কুয়াকাটার সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন করতে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা সেতু উদ্বোধণ করা হলেও সংস্থাটি বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে বাস সার্ভিসের কাঙ্খিত সম্প্রসারন করতে পারেনি।

সম্প্রতি বরিশাল ডিপোর জন্য আরো পাঁচটি এসি বাসের চাহিদা দেয়া হলেও সদর দপ্তর থেকে কোন সারাশব্দ মেলেনি। বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোটি একমাত্র প্রয়োজনীয় সচল গাড়ীর অভাবে যাত্রী সেবা সম্প্রসারিত হচ্ছেনা। গাড়ীর অভাবে ইতোমধ্যে বরিশাল-পটুয়াখালী ও বরিশাল-বরগুনা জেলা সদরের সাথে বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। ডিপোর অভ্যন্তরে অর্ধেকেরও বেশী জায়গাজুড়ে এখন অচল বাস পরে রয়েছে। এমনকি এ ডিপোর বাস সংকটের কারণে দেশের অন্যান্য ডিপোর গাড়ী এ অঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বগুড়া বাস ডিপো থেকে পঞ্চগড়-বরিশাল-পটুয়াখালী, রাজশাহী-বরিশাল-আমুয়া ও রাজশাহী-বরিশাল-ঝালকাঠী রুটে বাস সার্ভিস চালু করেছে। অনুরূপভাবে দিনাজপুর ডিপোর গাড়ী সেখান থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু করেছে। পাবনা ডিপোর গাড়ীও সেখান থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে।

এমনকি সদ্য চালু হওয়া বিআরটিসি’র গোপালগঞ্জ ডিপোর বাস বেনাপোল-বরিশাল ও সাতক্ষীরা- কুয়াকাটা রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। এছাড়া খুলনা বাস ডিপোর গাড়ীও সেখান থেকে বরিশাল হয়ে নলছিটি এবং যশোর থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল বাস ডিপোর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিরলস চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি আগের যেকোন সময়ের চেয়ে ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে বলেও ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ০৬, ২০২১)