আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। এতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। করোনা থেকে বাঁচতে তড়িৎ গতিতে আবিষ্কৃত হয়েছে টিকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত করোনার কোনো টিকাই মানবদেহে শতভাগ কার্যকারিতার প্রমাণ দিতে পারেনি। দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরেও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলা করতে করতেই শনাক্ত হলো নতুন ধরন ওমিক্রন। এতে নতুন করে বিপাকে পড়েছে বিশ্ব।

এমন পরিস্থিতিতে ভবিষতে আরও মহামারি হতে পারে এমন ইঙ্গিত দিলেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা প্রতিরোধী টিকার অন্যতম আবিষ্কারক সারাহ গিলবার্ট। তার মতে, পরবর্তী মহামারি হতে পারে আরও ভয়াবহ-মারাত্মক। সতরাং বর্তমান মহামারি থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো নষ্ট করা যাবে না। পরবর্তী মহামারি প্রতিরোধে বিশ্বকে প্রস্তুতি নিতে হবে বলেও জানান তিনি। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট রিচার্ড ডিম্বলবি লেকচারে বলেন, বিশ্বকে নিশ্চিত করা উচিত যে, পরবর্তী ভাইরাসের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।

গিলবার্ট বলেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে। ফলে বিদ্যমান টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কম কার্যকর হতে পারে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ওমিক্রন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি নতুন ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। সারাবিশ্বে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চার হাজার আটজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও চার লাখ ২২ হাজার ৪২১ জন। তবে সুস্থ হয়েছেন আরও তিন লাখ ২২ হাজার ৮৭৫ জন। এর আগের দিন পাঁচ হাজার ৬৫০ জনের মৃত্যু ও পাঁচ লাখ ২৫ হাজার ৫৮৩ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। সোমবার আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ লাখ ৭০ হাজার ৬৬২ জনে। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩০। এছাড়া সুস্থ হয়েছে ২৩ কোটি ৯৭ লাখ সাত হাজার ৩১৩ জন।

করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও সংক্রমণ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে মোট সংক্রমিত হয়েছে চার কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৬ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন আট লাখ আট হাজার ৭৬৩ জন। করোনা থেকে সেরে উঠেছেন তিন কোটি ৯৫ লাখ ২৩ হাজার ৫৭৩ জন।

ভারতে এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছে তিন কোটি ৪৬ লাখ ৪১ হাজার ৪০৬ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে চার লাখ ৭৩ হাজার ৩২৬ জনের। আর সুস্থ হয়েছে তিন কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৪ জন।

করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ছয় লাখ ১৫ হাজার ৬৭৪ জনের। মোট সংক্রমিত হয়েছে দুই কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৯১ জন।

তালিকায় এরপরের স্থানগুলোতে রয়েছে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, তুরস্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইরান, আর্জেন্টিনা, স্পেন ও ইতালি।

তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩১ নম্বরে। দেশে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪৪৩ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার একজনে। দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছেন ১৫ লাখ ৪২ হাজার ২৭৪ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশের হুবেই শহরে প্রথম করোনার অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০৬, ২০২১)