মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্রের টাকা উত্তোলনে গ্রাহক ভোগান্তি ও পোস্ট মাস্টারের অসৌজন্যমূলক আচরণে ক্ষুব্ধ-বিরক্ত অধিকাংশ গ্রাহক। এ ব্যাপারে গ্রাহকগণ পোস্ট মাস্টার জেনারেল কেন্দ্রীয় সার্কেল বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন বলে জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় তিন মাস আগে সখীপুর পোস্ট অফিসে দেলোয়ার হোসেন পোস্ট মাস্টার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও মেয়াদ শেষ (ম্যাচিউর) হওয়ার পর আসল টাকা উত্তোলনে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে গ্রাহকদের। নিয়ম বহির্ভূতভাবে মুনাফা থেকে টাকা কেটে রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া মেয়াদ শেষে আসল টাকা উত্তোলনেও প্রতিজন গ্রাহকের কাছ থেকে দুই থেকে চার হাজার টাকা করে রেখে দেওয়া হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর উপজেলার বংশী নগর এলাকার রওশন আরা জানান, সখীপুর উপজেলা পোস্ট অফিসে তাঁর তিন বছর মেয়াদি পনের লাখ টাকার একটি সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ (ম্যাচিউর) হয়েছে। দুই মাস আগে টাকা উত্তোলনের জন্য বই জমা দিয়েছিলেন। পোস্ট মাস্টার প্রথমে দুই হাজার, পরে টাকার অংক বেশি বলে চার হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় টাঙ্গাইল পোস্ট অফিস থেকে বই নিয়ে আসতে হবে বলে জানান। পরে বইয়ের জন্য টাঙ্গাইল গিয়ে জানা যায়, ওই বইটি বেশ কয়েকদিন আগেই সখীপুরের পোস্ট মাস্টার নিজে সই করে নিয়ে এসেছেন।

রওশন আরা আরও বলেন, টাকার জন্য সখীপুর পোস্ট অফিসে গেলে পোস্ট মাস্টার তাঁকে নানাভাবে কটূক্তি করেন। উপজেলার তক্তারচালা গ্রামের পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক রেবেকা সুলতানা পোস্ট মাস্টার জেনারেল কেন্দ্রীয় সার্কেল বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে তিনি প্রতিমাসে ১২ হাজার ৯৬ টাকা পান। নতুন পোস্ট মাস্টার প্রতি মাসেই ওই ৯৬ টাকা হাতে কেটে রেখে দিচ্ছেন। প্রতিবাদ করলেই তিনি গালিগালাজ শুরু করেন।একই রকম অভিযোগ করেন উপজেলার আড়াাইপাড়া গ্রামের রোজিনা (৩২) নামের এক সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক। প্রতিমাসে পোস্ট অফিসের ৩ হাজার ৬৪৮ টাকায় তাঁর সংসার চলে। কিন্তু পোস্টমাস্টারের অসৌজন্যমূলক আচরণে কেঁদে কেঁদে বের হচ্ছিলেন রোজিনা।

উপজেলার বগাপ্রতিমা গ্রামের শিউলী আক্তার ও বাঘের বাড়ি গ্রামের নার্গিস আক্তারও ওই পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেন।

এ ব্যাপারে সখীপুর ডাক ঘরের পোস্ট মাস্টার দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সত্য নয়। সারাদেশের পোস্ট অফিসগুলোতেই টাকার সঙ্কট রয়েছে। প্রতিদিন অনেক গ্রাহক এসে টাকার জন্য ভিড় করেছেন। অনেককেই সময়মত টাকা দিতে পারছিনা। সময়মত টাকা না পেয়ে কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে থাকতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের ডিপুটি পোস্ট মাস্টার মো. ওমর ফারুক বলেন, সখীপুর পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই পোস্ট মাস্টারকে ডেকে এনে এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তবে লিখিত কোন অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি। গ্রাহক হয়রানি ও গ্রাহকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকলে সংশ্লিষ্ট পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বেশ কয়েকজন মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। লিখিত অভিযোগ হাতে পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

(এসএম/এসপি/ডিসেম্বর ০৭, ২০২১)