ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের বউবাজারে রেল লাইনে তিনটি শিশু খেলছিল, দ্রুতবেগে ছুটে আসা রেলগাড়ী থেকে বাচ্চা গুলোকে বাঁচাতে নিজের জীবনের ঝুঁকি জেনেও এগিয়ে যান সালমান ফারসি। আর তাতেই ট্রেনে কাটা পড়ে একই পরিবারের তিন শিশুসহ নিহত হন সালমান ফারসি। গেল বুধবার সকালে সংঘটিত এই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রিকশাচালক রেজওয়ান আলীর মেয়ে লিমা আক্তার (৭), শিমু আক্তার (৪), ছেলে মো. মোমিনুর রহমান (২)। তাদের বাঁচাতে গিয়ে প্রতিবেশী মনষাপাড়া গ্রামের সালমান ফারসি নিহত হন। 

সালমানের এই সাহসিকতার নিদর্শন স্থায়ীভাবে ভবিষ্যতে কীভাবে ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করছেন উল্লেখ করে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামন নূর বলেন, ‘সালমান ফারসি যে সাহসিকতার পরিচয় দেখাল, এটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যেন মানুষের বিপদে এগিয়ে যাই।’

কারও পরিবারে একসঙ্গে তিনজন সদস্য হারালে ওই পরিবারের অবস্থা কী হতে পারে, আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন? সালমান ফারসি ওই তিনটা বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারাল। তারও তো বউ-বাচ্চা আছে। আমি যতবারই কল্পনা করি, ততবারই আমার চোখের পানি আটকাতে পারি না। তাকে কীভাবে শ্রদ্ধা জানাব, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।’নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিন শিশুসহ চারজনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় নিজেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে সরাসরি সদর উপজেলার বউবাজারে আসেন সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। সেখানে প্রথমে তিনি নিহত সালমান ফারসির কবরে এবং পরে তিন শিশুর কবরে মাটি দেন। এরপর স্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্যোগে বউবাজারে একত্র করা নিহত ব্যক্তিদের দুই পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। এ সময় সেখানে এলাকার অসংখ্য মানুষ সমবেত হন।

পরিবার দুটিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, সালমান ফারসির স্ত্রী সম্মত হলে তাঁর কাজের একটা ব্যবস্থা করা হবে। আর বাচ্চাদের বাবার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করা হবে।

আসাদুজ্জামান নূর ব্যক্তিগতভাবে সালমান ফারসি শামীমের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং ৩ শিশুর পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এ সময় সমপরিমাণ করে টাকা দুই পরিবারের হাতে তুলে দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ।

(ওকে/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০২১)