১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস
.jpg)
ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ : আগামীকাল ১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস। এদিন সকালে বিজয়ের গর্বে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা তাদের এই শহরের দখল নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি শহর ও শহরতলীর আশপাশ থেকে হাজার হাজার কৃষক-শ্রমিক-জনতা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে শহরে প্রবেশ করে। বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে সিরাজগঞ্জবাসী।
সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ৭১’র ৯ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদারমুক্ত করার লক্ষ্যে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমেই সদর উপজেলার শৈলাবাড়ী পাক বাহিনীর ক্যাম্প দখলের চেষ্টা করেন তারা। সম্মুখ যুদ্ধে ওইদিন শহীদ হন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ এবং আহত হন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। পাকবাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের সাথে টিকে থাকতে না পেরে পিছু হটেন মুক্তিযোদ্ধারা। ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা ১০ ডিসেম্বর বিশ্রাম নেন এবং ১১ ও ১২ ডিসেম্বর দফায় দফায় আক্রমণ চালান।
১৩ ডিসেম্বর থেকেই হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদার মুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। শহরের তিনদিক থেকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মোজাম্মেল হক ও ইসহাক আলীর নেতৃত্বে পূর্ব দিক থেকে, সোহরাব আলী ও লুৎফর রহমান দুদুর নেতৃত্বে পশ্চিম দিক থেকে, আমির হোসেন ভুলু ও জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে। এছাড়াও দক্ষিণ দিক থেকে ইসমাইল হোসেন ও আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার প্রতিরোধ ব্যুহ গড়ে তোলেন।
ওইদিন রাত তিনটা পর্যন্ত প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা কায়দায় সাড়াশি আক্রমণে টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী ট্রেনযোগে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে শহরের ওয়াপদা অফিসে পাকবাহিনীর মূল ক্যাম্প দখলে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওইদিন কওমী জুটমিল, মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে উড়িয়ে দেয়া হয় জাতীয় পতাকা। সম্পূর্ণরুপে পাক হানাদার মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ মুক্ত হবার পর মহুকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয় ইসমাইল হোসেনকে (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী) এবং মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জে সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় মরহুম আমির হোসেন ভুলুকে।
সিরাজগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী শফিকুল ইসলাম শফি জানান, ৯, ১১, ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চার দিনব্যাপী যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে শহীদ হন ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব কালু, সুলতান মাহমুদসহ ৬জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে ৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাক হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প স্থাপন করেই নানা রকম নির্যাতন জুলুম ধর্ষণ অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে সমগ্র শহর। নিষ্ঠুর ও জঘন্য পৈশাচিকতা ছড়িয়ে পড়ে শহরতলীসহ গ্রামীন জনপদেও।
তিনি বলেন, ১৭ জুন’৭১ সিরাজগঞ্জের বেসরকারী সাব সেক্টর পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের নেতৃত্বে কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাটে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এরপর থেকে বাঘাবাড়ি, নওগাঁ, বরইতলী, বাগবাটি, ঘাটিনার ব্রীজ, ছোনগাছা, ভাটপিয়ারী, শৈলাবাড়ী, ব্রহ্মগাছা, ঝাঐলসহ বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নিহত হয় সহগ্রাধিক পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর এবং আলশাম্স বাহিনী।
(আই/এসপি/ডিসেম্বর ১৩, ২০২১)