জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে দুবাই ফেরত যাত্রীর কাছ থেকে অভিনব কৌশলে ৩২ ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের একটি মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।

গত ২৭ জুন চট্টগ্রাম রাউজানের দক্ষিণ গহিরা এলাকার প্রবাসীর স্ত্রী মোছাম্মৎ লুৎফা আক্তার (৪৫) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

১৯ ডিসেম্বর রাউজান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ কায়সার হামিদ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দাখিল করা তদন্ত উল্লেখ করেছেন।

প্রতিবেদনে কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর গ্রামের ইব্রাহিম আল ফারুকীর পুত্র ইমতিয়াজ ফারুকী (৩৭) এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, রাউজান থানাধীন মোছাম্মৎ লুৎফা আক্তার প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধার মোঃ শামসুল আলম এর স্ত্রী হয়। স্ব-পরিবারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করে আসছেন। অভিযুক্ত ইমতিয়াজ ফারুকীর সহোদর ভাইও আরব আমিরাতে অবস্থানের সুবাধে তাদের মধ্যে পরিচয় ও পারিবারিকভাবে সম্পর্ক তৈরি হয়। ভিকটিমের স্বামী ও পুত্র আবু বকর দেশে আসার প্রস্তুতি নেয়। ভিকটিম তার নিজের এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য ৩২ ভরি ওজনের স্বর্ণের অলংকার (চুড়ি/ব্রেসলেট), মূল্য ২২ লক্ষ টাকায় ক্রয় করেন। যা অভিযুক্ত আসামী তার প্রবাসী ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন।

গত ০৫ মার্চ তার স্বামী, ছেলেসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর হতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে অবতরন করেন। ইমিগ্রেশন শেষে বিমান বন্দর হতে বের হওয়া মাত্রই ইমতিয়াজ ফারুকীর সাথে দেখা হয়। পরে বিভিন্ন কৌশলে একই গাড়ীতে তুলে নেন ভিকটিমকে এবং বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে রওয়ানা হয়। কিছুদুর যেতেই ইমতিয়াজ ফারুকী এবং তার সাথে থাকা (অপর একটি গাড়ীতে) অজ্ঞতনামা ৩/৪ জন ব্যক্তি ভিকটিমের স্বামী ও ছেলেকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের নিকট থাকা স্বর্ণের অলংকার জোরপূর্বক ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

এছাড়াও তাদের সাথে থাকা ০৬ টি ১০০ টাকা মূল্যমানের ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। যা বাদীর ছেলে গোপনে মোবাইলে ছবি ধারন করে রাখেন।

পরে ভিকটিমদের অপহরণ, হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকির অভিযোগে বিজ্ঞ আদালতে সিআর মামলা নং-১৯৯/২০২১ (রাউজান) দাখিল করেন।

দীর্ঘ ৬ মাস পর পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বাদী ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে মামলার বাদী ও ছিনতাইকারীর মোবাইল ফোনের অবস্থান খোঁজার চেষ্টা করেন। সিডিআরের তথ্য যাচাই করে ঘটনার সত্যতা পান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইমতিয়াজ ফারুকী(৩৭) ও তার সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন ব্যক্তির নিকটে ভিকটিমের থাকা ০৮ টি স্বর্গের চুড়ি। যার ওজন-৩২ ভরি। আনুমানিক যার মূল্য ২২ লক্ষ টাকা। ১৮ টি খালি ষ্ট্যাম্পে ভিকটিম ও পরিবারকে ভয় দেখিয়ে বলপূর্বক স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। একই সময়ে পাসপোর্ট এর বিনিময়ে ১০ লক্ষ টাকা চাদা দাবি করে পরবর্তীতে ১ লক্ষ টাকা নগদে গ্রহণ করেন এবং অবশিষ্ট টাকা প্রদানে ব্যর্থতায় ভিকটিমের ছেলেকে অপহরণ ও ভয়ভীতি হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করার বিষয়টি তদন্তে প্রতিয়মান হয়।

এমনকি অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন বিবাদীদের সনাক্ত সম্ভব না হওয়ায় তাদেরকে অত্র মামলার দায় হতে অব্যাহতি ও ইমতিয়াজ ফারুকীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য আদালতে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণে আদালতে প্রার্থনা রেখে প্রতিবেদন দাখিল করেন রাউজান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ কায়সার হামিদ।

ভুক্তভোগির পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সিনিয়র আইনজীবি ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী জিয়া হাবিব আহসান জানান, ‘বিদেশ প্রত্যাগত নারীর সর্বস্ব ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা পুলিশি প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক বেগম নাজমুন নাহার অভিযুক্ত ইমতিয়াজ ফারুকীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু ও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর আসামী বশির উদ্দিন খানকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।’

(জেজে/এসপি/ডিসেম্বর ২০, ২০২১)