নির্বাচনের পর জনপ্রতিনিধিদের দেখা মেলেনা যে গ্রামে!
মদন প্রতিনিধি : মাত্র পনেরটি বাড়ি আর ৫০ সদস্য নিয়ে একটি গ্রাম। যার অবস্থান নেত্রকোণার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে ফতেপুর ও শিবপাশা গ্রামের মধ্যবর্তী ধলাই নদীর পশ্চিমপাড়ে টিকে আছে এ গ্রামটি। গেজেটেও রয়েছে মাটুয়া গ্রামের নাম। ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ গ্রামে পুরুষ ভোটার ১০ আর নারী ভোটার ৯ জন রয়েছে।
এলাকাবাসী ও সচেতন মহল জানান, ভোটের সময়েই এ গ্রামে প্রার্থীরা আসেন, সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতিদেন । নির্বাচন শেষ হলে তাদের আর দেখা মিলে না।
৫ জানুয়ারী আসন্ন মদন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অথচ ওই গ্রামে নেই কোন পোস্টার, মাইকিং, প্রার্থীদের আনাগোনা। গ্রামের লোকজন বলতে পারে না সুনির্দিষ্ট প্রার্থীদের নাম। এমনি একটি গ্রাম নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের মাটুয়া। জনসংখ্যার দিক থেকে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে গ্রামটি।
জানা যায়, এক সময় এ গ্রামে হিন্দু প্রভাবশালী হরেন্দ্র চন্দ্র সরকার, বিরেন্দ্র চন্দ্র সরকার ও মহিষ চন্দ্রপাল পরিবারের সদস্যদের বসবাস ছিল। ১৯৭৬ সালে হিন্দু পরিবার গুলি বাড়ি বিক্রি করে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে যায়। সেই থেকে মুসলমান পরিবার গুলো এখানে বসবাস করছে।
সরেজমিন শনিবার মাটুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ধানের ক্ষেত, যোগাযোগের কোন রাস্তা নেই। যোগাযোগ বিছিন্নতার কারনে এ গ্রামের লোকজন সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মনের ক্ষোভে ক্রমান্নয়ে অর্ধশতাধিক ভোটার পাশের ইউনিয়নে স্থান্তান্তর হয়ে গেছে। বর্তমানে এ গ্রামে ১৯ ভোটার রয়েছে।
এ গ্রামের বাসিন্দা হিরণ মিয়া জানান,শনিবার পর্যন্ত এ গ্রামে কোন প্রার্থী আসেনি। জানিনা কে কোন প্রার্থী। তবে নির্বাচন আসলে প্রার্থীদের আনাগোনা হয়। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। নির্বাচন শেষ হলে আর উনাদের দেখা
একই গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,সরকার প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়,মসজিদ মাদ্রাসা গড়ে তোললেও এ গ্রামে কোন কিছুই নেই। সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত আমরা। নামেই গ্রাম । ফলে অনেকেই মনের দু:খে এ গ্রাম থেকে ভোটার স্থানান্তর করে পাশের ফতেপুর ইউনিয়নে চলে গেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মদন উপজেলা শাখার মহাসচিব মোতাহার আলম চৌধুরী বলেন,এক সময় এই গ্রামে প্রশিদ্ধ লোকের বসবাসছিল। তারা এখান থেকে চলে যাওয়ায় মুসলমান কয়েকটি পরিবার এ গ্রামে বসবাস করতে থাকে। সেবা বঞ্চিত এ গ্রামটিকে দ্রুত প্রশাসন ও জনপ্রতিনধিগণ শুদৃষ্টিতে রাখবেন।
তিয়শ্রী ইউপি চেয়ারম্যান ফখর উদ্দিন আহমেদ জানান,যোগাযোগ বিছিন্নতার কারণে এই এলাকাটি সেবা বঞ্চিত হয়। আমি আশা করব সরকার যদি ধলাই নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দেয় তা হলে এ গ্রামটি ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ বলেন, গ্রামটি শোনেছি খুবই অবহেলিত। গ্রামটিতে আমি অচিরেই যাব। তাদের সাথে কথা বলে সমস্যা গুলো চিহিৃত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
(এম/এসপি/ডিসেম্বর ২৭, ২০২১)
