আবীর আহাদ


আজ বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। অনেকেই এদেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, এমপি, সচিব, সেনাপতি, বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিসহ আরো অনেক অনেক কিছু হয়েছেন। হচ্ছেন। হতেই থাকবেন। এসব বড়োই পরিতৃপ্তি ও গর্বের বিষয়। কিন্তু সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি টেবিলের আলোচনায় বসে স্বাধীন হয়নি। একটি বিশ্বালোড়িত রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশটির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আর সেই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পশ্চাতে রয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধার সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বের অবদান।

কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয়, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের অবদানের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলেও দেশের জাতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'মুক্তিযোদ্ধা' ও 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দ দু'টি স্থান পায়নি! আমরা মনে করি না সংবিধান প্রণেতারা ইচ্ছেকৃত শব্দ দু'টি এড়িয়ে গিয়েছেন। হয়তো সংবিধান রচনায় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এটি হতে পারে। অনেক দেরিতে হলেও আমিই সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এ-বিষয়টি উত্থাপন করি। অতঃপর তারই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য সচেতন বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ সরকারের বিবেচনার জন্যে শব্দ দু'টি সংবিধানের যথাযথ স্থানে সংযোজন করার দাবি জানিয়ে আসছেন। দাবি দু"টি এখন মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। সংবিধানে শব্দ দু'টি বিশেষ করে 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটি লিপিবদ্ধ না থাকার ফলে চরম ইতিহাস বিকৃতি ঘটছে। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধকে গোলমালের বছর, গৃহযুদ্ধ, ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ইত্যাকার অপবিশেষণে মণ্ডিত করে ঐতিহাসিক ধারাবাহিক আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামের পথ বেয়ে অতঃপর অনুষ্ঠিত রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে থাকেন!

অনেক বিদগ্ধজন এ-যুক্তি পেশ করেন যে, মুক্তিসংগ্রামই মুক্তিযুদ্ধের নামান্তর। তাই যদি হবে তাহলে বাংলা ভাষার অভিধানে মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ শব্দ দুটি ভিন্নভাবে লিপিবদ্ধ হতো না। এমনকি ইংরেজি ভাষায়ও এ-দু'টি শব্দের ভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন, Liberation Struggle (মুক্তিসংগ্রাম) ও Liberation War / War of Liberation (মুক্তিযুদ্ধ)। মুক্তিযুদ্ধ হলো একটি জাতির জাতীয় স্বাধীনতা ও আর্থসামাজিক মুক্তি তথা জাতির সার্বিক মুক্তির আকাঙ্খা, আর সেই মুক্তির আকাঙ্খা বাস্তবায়নের প্রয়োজনে সংগঠিত হয় যে সশস্ত্র যুদ্ধ সেটিই মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর সুমহান নেতৃত্বে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। এখানে ঐতিহাসিক ও দার্শনিক প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধই মুখ্য।

অনেকে যারা মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও জীবনের মায়া ও দেশপ্রেমের অভাবে তাতে অংশগ্রহণ করেননি এবং অনেকে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলো, তারা তাদের মানসিক দৈন্যতা ও পরশ্রীকাতরতার জন্যে মুক্তিযুদ্ধকে এখনো মেনে নিতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের নাম শুনলে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়। অথচ তারাই মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় ফসল দু'হাতে লুটেপুটে খাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গাত্রদাহের মুখ্য কারণ হলো, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের সিংহভাগই ছিলেন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। সেই দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধারা দেশটি স্বাধীন করে এমন একটি ঐতিহাসিক কাজ করে ফেলেছেন যার ফলে তথাকথিত ধনিক ও সুবিধাবাদী-পরজীবী শ্রেণী সহজে তাদের কর্মের স্বীকৃতি দিতে চান না! তাদের অনেকেই আবার অর্থ আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক সংযোগে মুক্তিযোদ্ধা বনেও গেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা সবার আগে লুটেও নিয়েছেন; এখনো লুটছেন! এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বিষয়ে একেবারে নীরবই শুধু নয়, এসব দাবির বিপক্ষে তাদের অবস্থান। তারা মনে করে, মুক্তিযোদ্ধা হতে পেরেছি, মাসে মাসে ভাতা পাচ্ছি, মরে গেলে গার্ড অব অনার পাবো, এটাই তো গর্বের বিষয়, আর কী? এরাই মূলত: মুক্তিযোদ্ধাদের চরম শত্রু। আর শাসকগোষ্ঠী? তারা মুক্তিযুদ্ধের সবটুকু ফসল ভোগ করে আসছেন, কিন্তু তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় মর্যাদা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে উদাসীন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরই প্রতিষ্ঠিত দেশে পরবাসী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বদান্যতায় মুক্তিযোদ্ধারা একটি যৎকিঞ্চিত মাসিক সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। এই যা!

জাতীয় সংবিধানের মুখবন্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ শব্দ দুটি সংযোজনের বিষয়ে অনেকে এ-অভিমত প্রকাশ করেন যে, যেহেতু বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া সংবিধানে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ শব্দদ্বয় সংযোজিত হয়নি, সেহেতু এখন সংবিধানে তা লিপিবদ্ধ করা যাবে না। ৭২ সালের মূল সংবিধানে তো অনেক কিছুই লিপিবদ্ধ হয়নি বিধায় বিগত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সংবিধানে অনেক কিছুই লিপিবদ্ধ হয়েছে। সংবিধান কোনো কোরআনের বাণী নয় যে তাতে হাত দেয়া যাবে না। জাতীয় স্বার্থে ও সময়ের প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন পরিবর্ধন সংযোজন ও বিয়োজন হতেই পারে। তা হয়েছে হচ্ছে এবং হতেই থাকবে। সেক্ষেত্রে জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিষয় 'মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ' শব্দদ্বয় সংবিধানে সন্নিবেশিত হলে বরং আমাদের জাতীয় মর্যাদা ও গরিমাই মহিমান্বিত হয়।

এ-বিষয়টি বঙ্গবন্ধু-কন্যা সুবিবেচনায় নিতে পারেন। এটা তিনিসহ গোটা বাঙালি জাতি ও বিশ্ববাসী জানেন যে, তাঁর মহান পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। তাঁর নামে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী সরকারের প্রতিষ্ঠাতা-রাষ্ট্রপতিও ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর দুই গর্বিত ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালসহ তাঁর তাঁর বংশধর ও আত্মীয়স্বজন ছিলেন সেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথমসারির সংগঠক-মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর সরকারের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ শব্দদ্বয় যদি সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায় তাহলে তিনিসহ তাঁর গোটা পরিবার ও বংশধর সবচেয়ে আরো বেশি মহিমান্বিত, আরো বেশি গর্বিত ও আরো বেশি সম্মানিত হবেন।

আমরা তো এও জানি, জাতীয়, সময় ও ব্যক্তিস্বার্থের প্রয়োজনে জাতীয় সংবিধানে অনেক সংশোধনী সংযোজন ও বিয়োজন হয়েছে। সে-ক্ষেত্রে জাতীয় ইতিহাস ও মর্যাদার প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ শব্দ দু'টি সংবিধানে সংযোজন করতে অসুবিধা থাকার তো কোনো কারণ নেই! মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্বসুযোগ ভোগ করা যাবে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের কথা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা যাবে না, এটা কি মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি চরম অবজ্ঞা নয়? অসম্মান নয়? ইতিহাস বিকৃতি নয়?

এবার আসি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে। মুক্তিযোদ্ধা কারা এ-বিষয়ে বঙ্গবন্ধুই ১৯৭২ সালে সুস্পষ্ট সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন। সেটি হলো, 'মুক্তিযোদ্ধা মানে এমন একজন ব্যক্তি যিনি যে-কোনো একটি সংগঠিত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য হিশেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।' বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে সশস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই দেড় লক্ষের বেশি হবে না। কিন্তু আজ মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দু'লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজারের উর্দ্ধে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে ৮০/৮৫ হাজার অমুক্তিযোদ্ধা, এমনকি কয়েক হাজার রাজাকার আজ বীর মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন! এখনো অনেকেই অর্থের বিনিময়ে, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন।

কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় যে, বঙ্গবন্ধুর সেই কালজয়ী মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের নানান গোঁজামিলের সংজ্ঞার সুযোগে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকারদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি অমুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রীয় অর্থ ও অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করছে বিধায়, উনিশশো বাহাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়নের জন্য উচ্চ আদালত ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে জাতীয় কমিশন গঠন করার কথা বলে আসছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তথা সরকার এসব বিষয়ে বিন্দুমাত্র ইতিবাচক চিন্তা করছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। ফলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ অপমানিত ও ব্যথিত হৃদয় নিয়ে মর্মাহত জীবনযাপন করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক ভুয়ার অবস্থানহেতু প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় সংকটে ভুগছেন!

তবে আমাদের পুন:পৌনিক দাবির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সময়ে যাচাই বাছাই করেছে এবং করে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। আমরা আশা করি, সরকারের ভবিষ্যত সুনামের স্বার্থে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক তালিকা উপহার দেবেন। আমরা চাই, প্রকৃত কোনো একজন মুক্তিযোদ্ধা যেমন তালিকাবহির্ভূত থাকবেন না, তেমনি কোনো একজন অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকতে পারবে না। এখন দেখার বিষয়, সরকার এ বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করে।

এ ব্যতীত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সিংহভাগই অসুস্থ। চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মরছে। অনেকেই গৃহহীন। সন্তানরা চাকরি পাচ্ছেন না। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নেই বললেই চলে। শহীদ ও মৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অবস্থা আরো করোণ। পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণে রাজাকার অপশক্তি ও পরশ্রীকাতর মহল মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন ও সম্পদের ক্ষতিসাধন করছে। সব মিলিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সীমাহীন শৌর্য রক্ত ও বীরত্বে সৃষ্ট স্বাধীন দেশে যেনো দুর্বিসহ যন্ত্রণায় পরবাসীর মতো জীবন যাপন করে চলেছেন!

উপরোক্ত অবস্থাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সম্প্রতি ৮ দফাভিত্তিক একটি স্মারকলিপি প্রণয়ন করে সারা দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তাদের পরিবারের যেকোনো সদস্যের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছি। স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে বিভিন্ন প্রান্তে বেশকিছু বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। আমরা বিশালসংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে আসছে স্বাধীনতা দিবসের পূর্বে আলোচ্য স্মারকলিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে পেশ করবো। দেশের বিপুলসংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরসম্বলিত স্মারকলিপির দাবি নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধু-কন্যা যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। এজন্যই আমরা সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন প্রত্যাশা করে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করার জন্যে এর কপি সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছি। আশার কথা এতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছেন।

পরিশেষে সরকারসহ সচেতন দেশবাসীর উদ্দেশে আমাদের নিবেদন এই যে, জাতীয় ইতিহাস, মর্যাদা ও জাত্যাভিমান বিষয়ে অস্পষ্টতা ও ধুম্রজাল সৃষ্টি করে রাখা ইতিহাস ও সভ্যতা বিকৃতির সামিল। যে দেশটি একটি বিশ্বালোড়িত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বে পৃথিবীতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিশেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদানের স্বীকৃতি অবশ্যই আমাদের জাতীয় সংবিধানের যথাযথ স্থানে সন্নিবেশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অপরদিকে জাতীয় ইতিহাস ও মর্যাদার প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত বীরসৈনিক মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্বচ্ছ ও সঠিক তালিকা প্রণীত হওয়া একান্ত জরুরী বলে আমরা মনে করি। পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন মানের উন্নয়ন তথা তাদের সার্বিক কল্যাণে আমরা যে ৮ টি দাবি উত্থাপন করেছি, সেসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যার সরকার আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করবেন বলে আমাদের দৃঢ় আস্থা রয়েছে।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।