এমদাদুল হক স্বপন, ঝালকাঠি : আসন্ন ঝালকাঠি প্রেসক্লাব নির্বাচনের পরিচালক আনোয়ার হোসেন আনু ক্লাবের সভাপতি চিত্তরঞ্জন দত্ত’র ভোটার তালিকায় ব্যবহার করা দৈনিক ঝালকাঠি বার্তার নাম প্রত্যাহার করেছেন। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় তার কর্মরত মিডিয়ার নাম হিসাবে দৈনিক ঝালকাঠি বার্তার নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। তাই প্রশ্ন উঠেছে তিনি কিভাবে এখনো ভোটার থাকেন। এরপর গত ৮ জানুয়ারি আনোয়ার হোসেন আনু স্বাক্ষরিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। যা দৈনিক ঝালকাঠি বার্তা পত্রিকা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। অন্য একটি দৈনিক পত্রিকায় যোগদান করেও প্রেসক্লাব সভাপতির ভোটার তালিকায় আরেকটি পত্রিকার নাম প্রকাশ করার বিষয়টি সাংবাদিক মহলে সমালোচিত হয়। শুধু তাই নয় ঐ তালিকায় চিত্তরঞ্জন দত্তের আরেকটি পত্রিকা দৈনিক রুপালী’র নাম উল্লেখ করা হয়।

এ পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানাযায় ঝালকাঠিতে তাদের কোন নিয়োগকৃত প্রতিনিধি নেই। এ অবস্থায় যাচাই বাছাই না করে নির্বাচন পরিচালকের প্রেসক্লাবের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করায় তিনিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন পরিচালক আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, দৈনিক ঝালকাঠি বার্তা সম্পাদকের লিখিত চিঠির প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাইয়ের নির্ধারিত দিনে সত্যতা পাওয়ায় পত্রিকাটির নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তাহলে রুপালী পত্রিকায় প্রেসক্লাব সভাতি কর্মরত আছে কিনা বা বৈধ নিয়োগ আছে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন পরিচালক বলেন, তিনি একজন সিনিয়র পার্সন। আমি কিভাবে তা দেখতে চাইব। অপরদিকে প্রেসক্লাব সভাপতি চিত্ত রঞ্জন দত্তের বক্তব্য হলো আমি আপাতত এ বিষয়ে কোন মতামত দিবনা। এ বিষয়ে চিঠি চালাচালি হয়েছে। আমার বক্তব্য আমি পরে জানাব। তাহলে আপনি কোন পত্রিকার প্রতিনিধি হয়ে ভোটার হলেন এর কোন সদুত্তোর তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। ইতিপূর্বে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস সিকদার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় চার্জশীটভূক্ত আসামী হয়েছেন। এরপর সরকারের দুই মন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচি মন্তব্য করে একই ধারায় আরেকটি তদন্তনাধীন মামলায়ও তিনি আসামী হয়েছেন।

এছাড়াও ঝালকাঠিতে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবের সদস্য পদ না দিয়ে টালবাহানা করা, আবার স্বার্থের হানি হলে সামান্য অযুহাতে সদস্যপদ বাতিল করা, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘুরে ফিরে প্রেক্লাবের কমিটিতে থাকাসহ বিভিন্ন কারনে ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহি এ প্রেসক্লাবের সুনাম ক্ষুন্ন করা হচ্ছে বলে সাংবাদিকরা মনে করেন। সম্প্রতি প্রেসক্লাবের একজন সিনিয়র সাংবাদিক দুলাল সাহাও তার ফেসবুক আইডিতে প্রেসক্লাবের নির্বাচন সংক্রান্ত মতামতে সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করেন। তিনি তার মতামতে উল্লেখ করেন নির্বাচন নিয়ে মোর্চা সিন্ডিকেট হয়েছে। এতে তিনি সভাপতি প্রার্থী কাজি খলিলুর রহমানের প্রসঙ্গ টানেন। দুলাল সাহা তার এই মতামতের শেষ অংশে লিখেন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি কোন দলাদলির নির্বাচনে অংশ নেবনা। তিনি সভাপতি পদে মনোনয়ন কিনে ছিলেন বলে তার ষ্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন। এছাড়াও প্রেসক্লাবের আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে ক্লিন ইমেজ প্রার্থি হাসনাইন তালুকদার দিবস তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ সংগঠনকে কিছু ব্যক্তির নিয়ন্ত্রনে রাখতে সিন্ডিকেট করা দুঃখজনক।

দৈনিক ঝালকাঠি বার্তা পত্রিকার নাম উল্লেখ করে চিত্তরঞ্জন দত্তের ভোটার হবার বিষয়ে যা বললেন সম্পাদক মাহাবুব হোসেন। তিনি বলেন, আমি ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য নই, সাধারণ সদস্য। ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করি না। নির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত আমার জানার সুযোগ কম। এটা হয়ত আমার ব্যর্থতা। নির্বাচনের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কপি, যদি ক্লাবের সকল সদস্যদের সরবরাহ করা হয়, তাহলে আমার মত সদস্যদের জানার সুযোগ থাকে। আর সরবরাহ করা হয়ে থাকলে আমি কোন কপি পাইনি। তাই খসড়া ভোটার তালিকা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। যে কারণে সময়মত আপত্তি জানাতে পারিনি। কোন পত্রিকার স্টাফ কর্তৃপক্ষকে পূর্ব অবগত বা না জানিয়ে স্বেচ্ছায় চলে যাওয়া কিংবা নিয়োগ বাতিল করা প্রেসক্লাবে জানাতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

চিত্তরঞ্জন দত্ত ঝালকাঠির অপর একটি মিডিয়ায় যোগ দিয়েছেন তা সাধারণ সম্পাদক ভাল করেই জানেন। এর প্রমাণ ৮ জুলাই ২০২১ তারিখ চিত্ত রঞ্জন দত্ত, যোগদান করা পত্রিকার প্রকাশক এবং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস সিকদার জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলীর হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে পত্রিকাটি তুলে দেন। চিত্তরঞ্জন দত্ত দৈনিক ঝালকাঠি বার্তা কর্তৃপক্ষকে অবগত না করে গত ৬ জুলাই ২০২১ তারিখ অন্য একটি পত্রিকায় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন বলে সম্পাদক জানান।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ১১, ২০২২)