বিনোদন ডেস্ক : শুরু হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ প্রতিপাদ্যে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে এ উৎসব চলবে আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবারের উৎসবে ১০টি বিভাগে বাংলাদেশসহ ৭০টি দেশের মোট ২২৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। 

শনিবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিথ ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সব সময়ই নান্দনিক। বাঙালি পরিচালকরা তাদের চলচ্চিত্রে বিচিত্র জীবনবোধের ছাপ রেখে গেছেন। এমন অসংখ্য বাংলা চলচ্চিত্র রয়েছে যা বিশ্ব নন্দিত। এছাড়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই সারাবিশ্বে শিক্ষনীয়। এ উৎসবের মাধ্যমে সৃজনশীল মানুষদের মিলনমেলা হয়। অন্য দেশের সংস্কৃতি, সমাজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও বাংলাদেশও তাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। বিশেষ করে চলচ্চিত্রে এখন অনেক তরুণ সম্পৃক্ত হচ্ছেন এবং আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরে বিশ্বের কাছে দেশকে আরও পরিচিত করে তুলছেন।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে একটি জাতি তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে, নিজেদের প্রকাশ করতে পারে। আজকে কোভিডের কারণে সবকিছু মুখ থুবড়ে পড়েছে। যখন আমরা নতুন করে উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছি, তখন আবার করোনার নতুন সংক্রমণ আসছে। অথচ এর মধ্যেও আমাদের শিল্প অঙ্গন থেকে অনেক সুখকর খবর আমরা পাচ্ছি। নতুন করে তরুণরা চলচ্চিত্রে এগিয়ে আসছেন, এ শিল্পকে আরও সামনে এগিয়ে নিচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সুখকর।

বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন চলচ্চিত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রও পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব বাংলা চলচ্চিত্র হচ্ছে তা গর্ব করার মতো। সেগুলো দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করছে। আশা করি এ শিল্পমাধ্যম আরও উন্নত করবে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অনকে এগিয়ে। পৃথিবীর প্রাচীনতম চলচ্চিত্রটি ১৮৮৮ সালে নির্মিত লুই লে প্রিন্সের ‘রাউন্ডহে গার্ডেন সিন’। ঠিক তার ১০ বছরের মাথায় ১৮৯৮ হীরালাল সেন তৈরি করেন ‘দ্য ফ্লাওয়ার অব প্যারিস’ বা পারস্যের ফুল। হীরালাল সেন আমাদের মানিকগঞ্জের সন্তান। এরপর তিনি তার ভাই মতিলাল সেনের সাহায্যে পরের বছর ভাইয়ের সঙ্গে রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানির গোড়াপত্তন করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুও চলচ্চিত্রের উন্নয়ন বিশেষ ভূমিকা রেখে গেছেন। সব মিলিয়ে এটা বলায় যায় যে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প অনেক বড় এবং তা সাবকন্টিনেন্টাল দেশগুলোর মধ্যে চলচ্চিত্রের ধারক-বাহক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে মঞ্চে আয়োজনের অংশ হিসেবে ছিল বিভিন্ন নৃত্যদলের নৃত্য পরিবেশনা। এ সময় তামান্না হোসেনের নৃত্য পরিচালনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসব নিয়ে নৃত্য পরিবেশন করে ‘নৃত্যম’ এর শিল্পীরা। পরিবেশিত হয় মণিপুরী নৃত্যসহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবেশনা। আর আয়োজন উদ্বোধনের পর লেবানন ও জার্মানির যৌথ প্রযোজিত এবং মারিয়া ইভানোভা জেড পরিচালিত ‘দ্য অ্যাঙ্গার’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করা হয়।

এবারের উৎসবে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, ট্রিবিউট, বাংলাদেশ প্যানারোমা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিশে ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম সেশন-এ বাংলাদেশসহ ৭০টি দেশের মোট ২২৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য (৫০ মিনিটের বেশি) চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১২৯টি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৯৬টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আছে ৪০টি, যার মধ্যে ২২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন এবং ১৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য। উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, নন্দন থিয়েটার (মুক্তমঞ্চ) ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, অঁলিয়াস ফ্রাঁসেজ মিলনায়তন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাডেমি মিলনায়তন ও স্টার সিনেপ্লেক্স।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ১৬, ২০২২)