মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোর ও তরুণ যুবকরা নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার বাঁকসহ ইট সলিং নির্মিত গ্রামীন রাস্তার একটি ভাঙ্গা অংশ সংস্কার করেছেন। রাস্তা সংস্কারে যুবকদের উদ্যেগকে স্বাগত জানান এলাকাবাসী। তাদের এমন উদ্যেগে সহযোগিতাও করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজসহ স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ। 

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ১১নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামের পুরাতন জামে মসজিদ সড়কটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশে মাটি ভরাট করে সংস্কারের উদ্যেগ নেন ওই গ্রামের শাকিল আহমদ,এবাদুল হক,তাহমীদ,মনসুর,শাফী,মারজানসহ স্থানীয় কয়েকজন যুবক। সংস্কারের এই উদ্যেগটি বাস্তবায়নে নিজেদের ব্যক্তিগত তহবিল ও স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করেন তারা।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই যুবকরা স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিক ও স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসা কয়েকজনকে নিয়ে রাস্তার দু’পাশের দেবে যাওয়া অংশগুলো পুরাতন টিন,বাঁশ ও মাটি দিয়ে ভরাট করে বাঁধ তৈরি করছেন। উদ্দেশ্য বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে বাঁধ যাতে ধ্বসে না পড়ে। পাশাপাশি সড়কের সাথে যুক্ত হওয়া গ্রামের রাস্তার দেবে যাওয়া অংশে ছোট পিকআপে করে মাটি ফেলে ভরাট করছেন। এসময় তাদের সহাতায় এগিয়ে আসেন ওই গ্রামের মুরব্বি জয়নাল আবেদীন কাজল,মুহিবুর রহমান,এখলাছুর রহমান,ব্যবসায়ী আরাফাত আলীসহ স্থানীয় যুবক মুসলিম মিয়া।

স্থানীয়রা জানান, গ্রামের পুরাতন জামে মসজিদ সড়কটি দীর্ঘ দেড়যোগ আগে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার ইট সলিং দ্বারা নির্মিত করা হয়। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ গ্রামের শতশত মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই সড়ক দিয়েই চলাচল করে ট্রাক,পিকআপ,সিএনজি চালিত অটোরিকশা,কার ও মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন। শুধু ছোট যানবাহন নয়,মালামালবাহী ভারি যানবাহন চলাচলের কারনে রাস্তাটির অনেক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত্র হয়। বিভিন্ন অংশে সলিংকৃত ইট সরে যায়,তৈরি হয় বড় বড় গর্ত। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল সড়কের সাথে যুক্ত হওয়া অংশটি দিনদিন দেবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। স্কুলগামী ছোট ছোট শিশুদের রাস্তা পাড়াপাড় করতে হয় তীব্র ঝুঁকি নিয়ে। অনেক সময় গ্রামের ভিতর থেকে ছুটে আসা যানবাহনগুলো মূল সড়কে প্রবেশ করতে গিয়ে ওই সড়কের দু’দিক থেকে আসা তীব্র গতির যানবাহন চলাচলের সময় চালকরা ঠিকমত দেখতে না পওায়ায় দূর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সড়কটি সংস্কারের উদ্যেগ নেন স্থানীয় যুবকরা।

মঙ্গলবার সকাল থেকে যুবকদের সাথে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন ব্যবসায়ী আরাফাত আলী। এসময় তিনি বলেন,আমাদের এলাকার ছোট ছোট ছেলেরা চাঁদা তুলে অনেক শ্রম দিয়ে রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যেগ নেয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন,রাস্তাটি এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় পারবর্তীতে এই রাস্তাটির উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে যথাযত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিষয়টি নিয়ে এলজিইডি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আলমগীর চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে যুবকদের উদ্যেগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন,আপনার মাধ্যমে যেহেতু বিষয়টি জানতে পেরেছি তাই পরবর্তীতে কোন একটা প্রকল্পের মাধ্যমে জিডিপি ভুক্ত করে সংস্কারের উদ্যেগ নেয়া হবে। তবে রাস্তাটি জিডিপি ভুক্ত না হলে উদ্যেগ নেয়াটা কঠিন হবে। এসময় তিনি উপজেলা এডিপি থেকে এটা অচিরেই বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে এবং উপজেলার পরবর্তী সমন্বয় সভায় তুলো ধরা হবে বলে আশ্বস্থ করেন।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ১৮, ২০২২)