এ.কে আজাদ, রাজবাড়ী : পাল্টে যাচ্ছে ভাঙন কবলিত রাজবাড়ীর পদ্মা চরের অর্থনীতি। জেগে ওঠা বিশাল চরে গড়ে উঠেছে বসতি ও গো-খামার। শুষ্ক মৌসুমে বিশাল আকৃতির এই চরে চাষাবাদ করা হচ্ছে আখ, ধান, পাট, কাউন, তিল, টমেটোসহ নানা শাকসবজি। চরের বিস্তৃতি বাড়ার পাশাপাশি তা স্থায়ী চরে পরিণত হয়েছে। জনবসতিহীন দূর্গম চরে এখন বসেছে প্রাণের মেলা। চরে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেরই রয়েছে মহিষ ও গরুর খামার। ফসলের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে পাল্টে যাচ্ছে রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার চরাঞ্চলের অর্থনীতি। ফসল ও সবজি চাষের বিপুল সম্ভাবনাময় রাজবাড়ীর চর অঞ্চলে একটি পরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু করলে সম্ভাবনাটি বাস্তবে রূপ নেবে। অভাব ঘুচবে অভাবী চরবাসীর। উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে ফসল কিংবা সবজিজাত সামগ্রীর। অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে চর জুড়ে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ভাঙন কবলিত পদ্মা নদীর চরগুলো ক্রমশ আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। আর এসব জমিতে আবাদ হচ্ছে নানা অর্থকরী ফসল। গত কয়েক বছরে খণ্ড খণ্ড আকৃতির বড় বড় চর জেগেছে। এসব চরে অনেক মানুষের মাথা গোজার ঠাঁই করে দিলেও বর্ষা মৌসুমে পড়তে হয় ভয়াবহ ভাঙনের ঝুঁকিতে। বর্তমানে চরের অনেক স্থানে বসতি স্থাপন করে তাতে বসবাস করছে ভূমিহীন মানুষেরা। নদীর পাড় থেকে তাকালেই চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সবুজ ফসলের সরব উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। তবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদীবক্ষ থেকে পানি তুলে সেচ দিয়েছেন কৃষকেরা। পরিত্যক্ত চরে ফলিয়েছেন সবুজ ফসল।

পদ্মার কূলঘেষে থাকা প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে গবাদি পশু। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এসব কৃষক তাদের শত শত গরু-বাছুর নিয়ে এসেছেন চরে। পলি মাটির আস্তরণে জেগে ওঠা ঘাস, বিচালি খাইয়ে তারা গরু গুলোকে লালন করছেন। এক সময়ে পদ্মা নদীর পানির প্রাচুর্য্যতা থাকলেও ক্রমশ তাতে ভাটা পড়েছে। এখন জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চর।

যেসব ফসলি জমি একদিন বিলীন হয়ে গিয়েছিল সেখানে পুনরায় নতুন করে চোখে পড়ছে ফসলের ক্ষেত। পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে চর ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। শুধু ফসল কিংবা গো খাদ্য নয়। পাংশা উপজেলার হাবাসপুরে পদ্মার বুক জুড়ে বিশাল চর জেগে ওঠায় সেখান থেকে খেয়াঘাট প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে স্থানান্তর করা হয়েছে। যার ফলে বিশাল এই বালুময় চরে খেয়াঘাটের যাত্রীদের স্বল্প সময়ে পৌছে দিতে অনেকে ঘোড়ার গাড়ি চালনা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

চরে গরু নিয়ে আসা লতিফ উদ্দীন ও মানিক জানান, গো খাদ্যের দাম এখন অনেক বেশি। ধানসহ নানা ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে চরে। ঘাস বিচালিও রয়েছে প্রচুর। এগুলো টাকা দিয়ে কিনতে হয় না। যে কারণে আমার গরুগুলো নিয়ে চরে এসেছি।

পদ্মার চরের বাহাদুরপুরের কৃষক সালাম হোসেন, আতিকুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন ও আতিয়ার জানান, ক্রমশ এ চরটির পরিমাণ বাড়ছে। পলি পড়ে ফসল চাষে উপযোগী হচ্ছে তাদের এসব জমি। প্রায় তিনযুগ আগে তাদের পূর্ব পুরুষের জমিতে তারা নতুন উদ্যমে চাষ শুরু করেছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় পদ্মা নদীর চরের অর্থনীতি পাল্টে যাবে। সে লক্ষ্যেই আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন নদীভাঙা মানুষগুলো।

(একে/এএস/জানুয়ারি ১৯, ২০২২)