স্টাফ রিপোর্টার : গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের এককালীন অর্থ বরাদ্দ চান ডিসিরা। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের ষষ্ঠ অধিবেশন শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ কার্য অধিবেশন হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। কারণ গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশে যে দুর্যোগগুলো হয়েছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও একই সঙ্গে করোনা; সেই সময়ে সরকারের যে নির্দেশনা সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসকরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছেন। করোনার সময়ে প্রায় ৭ কোটি মানুষকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং ৩৩৩-নম্বরের মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ মানুষকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই কঠিন কাজটি সম্ভব হয়েছে, জেলা প্রশাসকদের সমন্বয়ের কারণে।’

তিনি বলেন, ‘আলোচনার সময় জেলা প্রশাসকরা প্রস্তাব রেখেছেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আমরা এককালীন অর্থ বরাদ্দ দিতে পারি কিনা। আমরা সেখানে দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা বলেছি দুই বা তিন কিস্তিতে দিলে কাজের গতি ঠিক থাকে। কাজের মনিটরিং ভালো হয়, কাজের ফলাফল ভালো হয়।’

‘কয়েকটি উপজেলায় ইজিপিপি (অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি) প্রকল্প বাদ দিয়েছি বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (বিবিএস) সুপারিশে। যেখানে দারিদ্রের হার ২০ শতাংশের নিচে সেই উপজেলাগুলো আমরা তালিকা থেকে বাদ দিয়েছি। ওনারা (ডিসি) সেগুলো তালিকাভুক্ত করার অনুরোধ করেছিলেন। আমরা বলেছি, দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। যে উপজেলাগুলো উন্নত হবে সেগুলো থেকে আমরা ক্রমান্বয়ে ইজিপিপি প্রকল্প বাদ দেবো। পিছিয়ে পড়া উপজেলায় আমরা বেশি করে বিনিয়োগ করবো। আগে ইজিপিপিতে ২০০ টাকা বরাদ্দ ছিল, এই অর্থবছর থেকে তা ৪০০ টাকা করেছি।’

পাহাড় ধসের বিষয়ে আগেই কোনো সতর্ক সংকেত দেওয়া যায় কিনা- সেই ব্যাপারে প্রস্তাব আসছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেটা আমরা গ্রহণ করছি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো। যাতে পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যু না হয়।’

এনামুর রহমান বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে যারা নিখোঁজ হন তাদের আইনি কাঠামো তৈরি করে তাদের মৃত ঘোষণা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে ওই পরিবারের লোকেরা সরকারের অনেক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। এটা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলেছি, মন্ত্রিপরিষদে আলোচনা করে আমাদের অবশ্যই একটি সিদ্ধান্তে আসা দরকার।’

ডিসিরা ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং মুজিব কেল্লার সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছি। কারণ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে দেখেছি আশ্রয়কেন্দ্রের ঘাটতি রয়েছে। তারা আরও বলেছেন, প্রত্যেকটা আশ্রয়কেন্দ্রে যাতে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম থাকে, যাতে বৃষ্টির পানি ধরে পান করার জন্য ব্যবহার করা যায়। দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, গত দুই বছরে যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো করা হয়েছে, সেগুলোতে এই ব্যবস্থা আছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা সাত হাজারের ওপরে। ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ২২০টি নতুন করে করেছি। আরও এক হাজার করার জন্য আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভূমি ও গৃহহীনদের দুর্যোগ সহনীয় ঘর দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ২ লাখ ভূমি ও গৃহহীনকে ঘর দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০টি ঘরের অভিযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এগুলো আমলে নিয়েছেন, তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যারা অবহেলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ঘরগুলো পুনরায় নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন।’

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৯, ২০২২)